শঙ্কর মণ্ডল
বিদায় ২০২২, স্বাগত ২০২৩ সাল। সেই সঙ্গে অত্যন্ত খুশি হব আগামী বছর যদি বাংলা এই কলঙ্কময় রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে সুস্থ রাজনীতির জন্ম দিতে সক্ষম হয়। বলা ভাল, এই অসুস্থ রাজনীতিবিদরা সুস্থতা লাভ করে। হ্যাঁ, রাজনীতি কোনও করে খাওয়ার জায়গা হতে পারে না।রাজনীতি কখনও রাজার নীতি নয়। রাজনীতি হল, নীতির রাজা। এখানে দলগত আদর্শকে সম্বল করে ভিন্ন মতাদর্শের দলের সাথে লড়াই হবে। লক্ষ্য হবে দেশের ও দেশবাসীর কল্যাণ করা। শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। তার জন্য অনেক জায়গা আছে। আমাদের রাজ্য মানে পশ্চিমবঙ্গ চিরকালই রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ভারতবর্ষে বিশেষ সন্মান অর্জন করেছে। ভোটে জেতাই কখনও যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না। আমাদের দেশে হরিপদ ভারতী বা সোমেন ঠাকুররা ভোটে জিততে পারতেন না। হরিপদ ভারতী কেবল জনতা পার্টির টিকিটে ৭৭ সালে জিতেছিলেন। বহু অফার পেয়েছিলেন স্বয়ং বিধান রায়ের কাছ থেকেও।
কিন্তু তিনি কখনওই আদর্শ পরিত্যাগ করেন নি। ভোটে না জিতলেও হরিপদ ভারতীর বক্তব্য মানুষকে মুগ্ধ করত। এমনকি ভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকেও। তাই আজ যখন কেবল ভোটে জেতার জন্য, টিকিট নিশ্চিত করার জন্য ও সর্বোপরি টাকা রোজগারের জন্য যখন তখন দল পরিবর্তন করে, তখন তাঁদের রাজনৈতিক যোগ্যতা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন থেকে যায়।
যাইহোক, আজ রাজনৈতিক যোগ্যতাহীন মানুষদের নেতা বানানোর ফলেই এখন বাংলার মানুষ উপহার হিসেবে পেয়ে চলেছে শুধুই দুর্নীতি। আজ শাসক তৃণমূল করছে। তার আগে সিপিএম করেছে। আর এই নেতৃত্ব নিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এলে তারাও করবে।
আবাস যোজনা, নিয়োগ দুর্নীতি সহ একের পর এক দুর্নীতি শুধু তৃণমূলকে নয়, সারা বাংলার সন্মানকেই ভূলুন্ঠিত করেছে। আর তৃণমূলের নেতারা যখন এই দুর্নীতিকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে যেভাবে অসাংবিধানিক ও হুমকি দেওয়া কথা বলছেন, সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিজেপি নেতারাও সুযোগ পেলে একই আচরণ করে চলেছে। যদিও তৃণমূলের সন্ত্রাস বহু বিরোধী কর্মীদের মৃত্যু ঘটিয়েছে। কিন্তু তার জন্য রাজনৈতিক আন্দোলন ও আইনি লড়াই করায় গণতন্ত্রের ওপর ভরসা করা দল ও নেতার কর্তব্য।
হিংসার বিরুদ্ধে আর একটা হিংসা কখনও সমাধান নয়। আর এই অরাজক রাজনীতির মধ্যে সিপিএমের ভদ্রলোক সাজা অত্যন্ত সিগনিফিকেন্ট। এদের ইতিহাস ঘাঁটলে, এদের মুখোশ খুলতে এক মিনিট লাগবে না। এহেন পরিস্থিতিতে আর একটা ইতিহাস মানুষের কাছে আরও বেশী বেশী করে মনে করিয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে যাঁরা পশ্চিমবঙ্গ নামটা তুলে দিয়ে বাংলা করতে চাইছেন, তাঁদের হইতে সাবধান। কারণ, এই পশ্চিমবঙ্গ কেন হল, তার ইতিহাসও মনে রাখতে হবে। সেইসঙ্গে সেটি আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। সেই সঙ্গে ৪৬-এর গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং-এর কথা স্মরণ করে নিজেদের প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
বি: দ্র: লেখক সংযুক্ত হিন্দু ফ্রন্টের সভাপতি। প্রবন্ধে মতামত তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত।