মৃন্ময় ভট্টাচার্য
মানুষের প্রয়োজনেই ধর্মের সৃষ্টি। প্রয়োজন ফুরালেই প্রাকৃতিক নিয়মে তার বিলোপ হবে। ধর্ম বিদ্বেষী অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে থাকা কিছু তথাকথিত পণ্ডিতদের ধর্মের ইতিহাস জানা উচিত ছিল। জানা উচিত ছিল মানুষের পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বে উত্তরণের উপকরণ সম্বন্ধে।
বর্তমান যুগে কিছু মানুষ নিজেরাই নিজেদের আধুনিক আলোকিত পণ্ডিত মনে করে। ধর্মের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রচারে ব্যস্ত। আবার বেশ কিছু অবুঝ মানুষ, ধর্মকেই তাদের অর্থ উপার্জনের মাধ্যম করেও সেই বিরুদ্ধবাদীদের দলের সমর্থক। এরা ধর্মেও আছে, জিরাফেও আছে। এটা যে দ্বিচারিতা, সে বোধও তাদের নেই।
পৃথিবীতে প্রথম রাষ্ট্রীয় সংবিধানের প্রচলন শুরু হয় সান মারিনোতে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ। কিন্তু ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম লিখিত রাষ্ট্রীয় সংবিধানের প্রচলন ঘটে, তার আগে?
তার আগে কি মানুষ সভ্যতার আলো দেখেনি? সভ্য মানুষের ইতিহাস তো হাজার হাজার বছরের প্রাচীন! আমাদের ভারতীয় সভ্যতার আদি সঠিকভাবে না জানা গেলেও তা আনুমানিক দশ হাজার বছরের তো হবেই। সেই রাষ্ট্রহীন, সংবিধানহীন প্রাচীন যুগে সুস্থ সমাজ কোন্ আইনের দ্বারা পরিচালিত হতো? তা কি জানেন না, আধুনিক বিজ্ঞ ধর্ম বিদ্বেষীরা?
পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুর নিজ নিজ ধর্ম আছে। জলের ধর্ম যেমন উঁচু থেকে নিচুতে পতিত হওয়া। সে যুগের পণ্ডিতেরা সুস্থ সমাজ গড়তে, জীবন ধারণের সহজ দিশা নির্দেশ করতে ধর্মের প্রচলন করেন। যা ছিল গোষ্ঠী কেন্দ্রিক বা আঞ্চলিক। পরবর্তীকালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ধর্মের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন আঞ্চলিক ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে উৎকৃষ্ট ধর্মের শ্রীবৃদ্ধি হয়। ধর্মে কিছু অসাধু নেতৃত্বের স্বার্থপরতার কারণে যখন অধর্মের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তখন ধরণীতে বিভিন্ন ধর্মসংস্কারকের আবির্ভাব ঘটে কলুষিত হয়ে যাওয়া ধর্মকে সংশোধিত করতে। এভাবেই আমাদের সনাতন ধর্ম, একমাত্র প্রাচীন ধর্ম। যা এখনও প্রবাহমান ও প্রসারিত হয়ে চলেছে বিশ্বময়।
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্॥
পরিত্রাণায় হি সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে॥”
রাষ্ট্র গঠন ও রাষ্ট্রীয় সংবিধানের প্রবর্তন হলেও,
ধর্মান্ধতা এড়িয়ে, ধর্ম যতদিন সমায়োপযোগী ও পরিশোধিত হয়ে চলবে, ততোদিন শত বিরোধিতা সত্ত্বেও ধর্মের অবস্থান থাকবে এই পৃথিবীতে।