18 C
Kolkata
December 24, 2024
দেশ

দেশে দুর্ভিক্ষ ডেকে আনার তৃণমূলী ইস্তাহার

সংবাদ কলকাতা, ১৭ এপ্রিল: অবশেষে আজ, বুধবার প্রকাশিত হল তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহার। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চর্চা। অনেকেই এই ইস্তাহারকে পরিকাঠামো বিরোধী ও দেশকে দেউলিয়া করার ইস্তাহার বলে আখ্যায়িত করেছেন। আবার অনেকেই এই ইস্তাহারকে তোষণবাজির ইস্তাহার বলে দাবি করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই দান খয়রাতির ইস্তাহারে সাধারণ মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সুরাহা দেওয়া হলেও স্থায়ী কোনও সমাধান মিলবে না। বাংলার মতো দিনের পর দিন দেশে দেনার পাহাড় জমবে। বরং মানুষ গরিবই থেকে যাবে। দেশের নাগরিককে অর্থনীতির স্থায়ী ভিতের ওপর দাঁড় করানোর কোনও দিশা নেই এই ইস্তাহারে। যাতে মানুষ সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর না করে সম্মানের সহিত নিজেই নিজের উপার্জন করে খেতে পারবেন। দেশের বর্তমান আর্থিক পরিকাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে এই ধরণের সুবিধা কয়েক বছরের মতো দেওয়া সম্ভব হলেও পরে দেশকে পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো চরম অর্থনৈতিক সংকট বা দুর্ভিক্ষের সামিল হতে হবে। এভাবে মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলীল করা যাবে না। তাছাড়া তৃণমূলের শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গে জনসমর্থন কিছুটা থাকলেও বাংলার বাইরে কোনও অস্তিত্ব নেই। তাই সারাদেশে যেখানে মোদী হাওয়া বইছে, সেখানে তৃণমূল খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে। তৃণমূলের পক্ষে কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসা আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। পাশাপাশি, ইন্ডিয়া জোট এই মুহূর্তে বড় কিছু করে দেখাতে পারবে বলে মনে করছে না রাজনৈতিক মহল। সারা দেশে মোদী হাওয়ার দাপটে ইন্ডিয়া জোটের মুখ্য দল কংগ্রেসের পক্ষে ৪০টির বেশি আসন অসম্ভব ব্যাপার। এদিকে তৃণমূলও হাতে গোনা দু-তিনটি রাজ্য ছাড়া খুব বেশি প্রার্থী দেয়নি।

যদিও আজ তৃণমূলের এই ইস্তাহারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১০ শপথকে দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রতিশ্রুতিগুলি তৃণমূলের মূল এজেন্ডায় থাকবে বলে দাবি করা হয়েছে। তবে ইস্তাহারে দেশের মৌলিক পরিকাঠামো উন্নয়নের কোনও দিশা নেই। এই ১০টি প্রতিশ্রুতি ও তার বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়-

১) স্বল্পমূল্যে পেট্রপণ্য ভারতবর্ষে সকলে ধন্য
পেট্রল-ডিজেল ও এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সাশ্রয়ী মূল্যে প্রদান করা। প্রাইজ স্টেবিলাইজেশন ফান্ড তৈরি করে জ্বালানী মূল্যের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করা। তবে প্রশ্ন উঠছে এই ফান্ড আসবে কোথা থেকে?

২) নিশ্চিন্ত ভবিষ্যত অর্জন, যুবশক্তির গর্জন
২৫ বছর পর্যন্ত সকল স্নাতক ও ডিপ্লোমা হোল্ডারদের এক বছরের শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ প্রদান। শিক্ষানবিশদের মাসিক বৃত্তি প্রদান করা ও উচ্চশিক্ষায় পড়ুয়াদের ১০ লক্ষের স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড দেওয়া। প্রশ্ন উঠছে এই টাকা স্থায়ীভাবে প্রদান করা হবে কিভাবে? টাকা আসবে কোথা থেকে? এইসব প্রকল্প বাংলার ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা দেনার পাহাড় জমছে। যা রাজ্যকে দেউলিয়া করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

৩) স্বচ্ছ আইন, স্বাধীন ভারত
ধোঁয়াশাযুক্ত সিএএ বিলুপ্ত করা হবে। এনআরসি বন্ধ করা হবে। ইউসিসি ভারতজুড়ে প্রয়োগ করা হবে না। সিএএ বিলুপ্ত করতে গেলে লোকসভা ও রাজ্যসভায় উপযুক্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা অবাস্তব ব্যাপার। তৃণমূল কিংবা ইন্ডিয়া জোটের সেই জন সমর্থন নেই।

৪) এগিয়ে বাংলা, এগোবে ভারত
বাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আদলে সমস্ত মহিলাদের মাসিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। আয়ুষ্মান ভারতের বদলে একটি উন্নততর স্বাস্থ্যসাথী বিমা প্রদান করা হবে। যা ১০ লক্ষের স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা দেবে। প্রশ্ন হল, এইসব প্রকল্প চালু করে রাজ্য বার বার ঋণ করতে বাধ্য হচ্ছে। সেই ঋণ শোধ হওয়ার কোনও দিশা নেই। বাংলার বাইরের রাজ্যগুলির মানুষ এইসব অনুদানের চেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পথকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে। অতএব অন্যান্য রাজ্যে এইসব প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

৫) বর্ধিত আয় শ্রমিকের সহায়
সমস্ত জবকার্ড হোল্ডারদের ১০০ দিনের কাজের গ্যারেন্টি ও তাঁদের ৪০০ টাকা দৈনিক মজুরির ব্যবস্থা। প্রশ্ন হল, বর্তমানে ১০০ দিনের কাজের টাকার দুর্নীতির জবাব রাজ্য এখনও কেন্দ্রকে দেয়নি। তার ওপর ৪০০ টাকা করে দৈনিক মজুরির বিপুল অঙ্কের টাকা দেশের কোষাগারে নেই।

৬) দেশজুড়ে বাড়ি হবে সবারই
দেশের প্রত্যেকের জন্য আবাসন নিশ্চিত করা হবে। প্রত্যেককে পাকা বাড়ি দেওয়া হবে। প্রশ্ন থাকছে, এরাজ্যের আবাসন প্রকল্পেই শাসক দলের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ১৩ বছর ক্ষমতায় থাকলেও এখনও সবাই বাড়ি পায়নি। এমনকি যাদের প্রাপ্য, সেইসব গরিব ও প্রান্তিক মানুষেরা বাড়ি পাচ্ছে না। অথচ নেতা কর্মীদের অনুগতরা আবাস যোজনার টাকা আত্মসাৎ করছে। যাদের পাক বাড়ি আছে, তারা আবার বাড়ি পাচ্ছে। আমফান ঝড়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ না পেলেও, নেতা কর্মীরা দুই তলা বাড়ির অসম্পূর্ণ অংশ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছে।

৭) জ্বালানির জ্বালা কমবে, দেশের জ্বালা ঘুচবে
প্রত্যেক বিপিএল পরিবারকে বছরে বিনামূল্যে ১০টি সিলিন্ডার দেওয়া হবে। পরিবেশ বান্ধব রন্ধন প্রক্রিয়া ব্যবহারের অভ্যাস বাড়ানো হবে। প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যে বর্তমানে সিলিন্ডার পিছু ২৯১ টাকা ট্যাক্স নিচ্ছে। অথচ কেন্দ্র ২৫ টাকা ট্যাক্স নিচ্ছে। তাহলে কে বেশি ত্যাগ স্বীকার করছে।

৮) অনেক হয়েছে শাসন, এবার দুয়ারে রেশন
প্রতি মাসে প্রত্যেক রেশন কার্ড হোল্ডারদের ৫ কেজি বিনামূল্যে রেশন প্রদান করা হবে এবং তা মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রশ্ন বর্তমান কেন্দ্র সরকার এই প্রকল্প চালু রেখেছে। এতে নতুনত্ব কিছু নেই।

৯) আমাদের অঙ্গিকার, নিরাপত্তা বাড়বে সবার
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যুবকদের উন্নতির স্বার্থে ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী , তপশীলী জাতি ও উপজাতিদের উচ্চশিক্ষার বৃত্তি বাড়ানো হবে। ভারতের ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য বার্ধক্য ভাতা বৃদ্ধি করে মাসিক হাজার টাকা করে অর্থাৎ বার্ষিক ১২ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

১০) বর্ধিত আয় নিশ্চিত এবার, ফুটবে হাসি অন্যদাতার
স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুসারে দেশের সকল কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদানের আইনগত গ্যারেন্টি দেওয়া হবে। প্রশ্ন হল রাজ্য সরকারের এই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। রাজ্যে যদি এই অবস্থা হয়, দেশের ক্ষেত্রে কতটা বিশ্বাসযোগ্য হবে?

সর্বোপরি দেশকে শক্ত অর্থনৈতিক ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে প্রতিটি নাগরিককে স্বনির্ভরশীল করে তোলার কোনও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কথা এই ইস্তাহারে নেই। যেখানে মানুষ রাষ্ট্রের অনুদানের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে কর্ম সংস্থানের নিশ্চয়তা পেতে পারে, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।

Related posts

Leave a Comment