30 C
Kolkata
June 16, 2025
দেশ

দেশে ও রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের কেন এই জয়?

সংবাদ কলকাতা: দুর্নীতির সমস্ত তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়ে সুবিধাবাদের রাজনীতির জয় হল রাজ্যে তথা দেশে। মমতার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে খুশি হয়ে মহিলারা ঢেলে ভোট দিয়েছেন তৃণমূলকে। সর্বভারতীয় স্তরেও কংগ্রেসের মহিলাদের বছরে একলক্ষ টাকার উপঢৌকনের টোপ গিলে কংগ্রেসকে ঢালাও ভোট দিলেন দেশের গরিব মহিলারা। ফলে গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ আসনে জয়ী হল হাত শিবির।

তবে এতসব লোভ দেখানো সত্ত্বেও দেশের সিংহভাগ মানুষ এখনও মোদী ম্যাজিকে মজে রয়েছেন। সেজন্য দেশের অর্থনৈতিক ভিতকে শক্তিশালী কাঠামোর ওপর দাঁড় করাতে দেশের সিংহভাগ মানুষ এখনও বিজেপি তথা এনডিএ জোটকে ভোট দিল। ফলে দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রলোভনের চক্রে পড়ে বিজেপি অপেক্ষাকৃত দুর্বল হলেও মোদির নেতৃত্বে এনডিএ জোটকেই ভরসা রাখল দেশের সিংহভাগ মানুষ। এনডিএ জোট ২৯৩-এর সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে ফের সরকার গঠনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

প্রসঙ্গত এবার পশ্চিমবঙ্গে নানা দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যেও তৃণমূলকে সিংহভাগ আসন দিয়েছে। এর পিছনে বড় কারণ, বামেদের ৩৪ বছর এমনকি তৃণমূলের ১৩ বছর। এই ৪৭ বছরের দীর্ঘ শাসনকালে রাজ্যে খেতে না পাওয়া মানুষের সংখ্যা এখনও প্রচুর। তাঁদের অনেকের দিন আনা, দিন খাওয়া অবস্থা। অনেকের সংসার চালনা খুবই কঠিন ব্যাপার। একে রাজ্যে চাকরি নেই। তাতে খেতে না পাওয়া বেকার কৃষি, মজুর, শ্রমিকের সংখ্যাও প্রচুর। রাজ্যে ব্যবসার অবস্থাও ভালো নয়। অনেকেই ধার দেনা করে পুঁজি বিনিয়োগ করে পথে বসেছেন। ব্যবসা চালাতে পারেননি। কারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। কিনবে কোথা থেকে?

ফলে মানুষের দৈনিক বা মাসিক রোজগার একেবারে তলানিতে। রাজ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের সংসার চালানো খুবই কঠিন ব্যাপার। তাঁদের পক্ষে দেশের ভালো মন্দ, দুর্নীতি, উন্নতি নিয়ে চর্চা করার মতো সময় নেই। কি করে সংসার চালাবে। কি করে উনুনে হাঁড়ি চড়বে, এই ভাবতে ভাবতেই তাঁদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে। তাঁরা প্রতিনিয়ত ভাবছেন কিভাবে জীবন ধারণ করবেন, কিভাবে খেয়ে পরে বেঁচে থাকবেন। নিজের সন্তান ও স্ত্রীর মুখে কিভাবে দুবেলা অন্ন তুলে দেবেন। এই নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তাঁদের দিন চলে যায়। আর এইসব হতদরিদ্র পরিবারের কাছে লক্ষ্মীর ভান্ডার একটি বড় নিশ্চয়তা। কিভাবে এই টাকা দীর্ঘদিন আসবে, কোথা থেকে আসবে, দেশের কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কোন পথে রোধ করা যাবে এসব নিয়ে ভাবার চেয়ে জীবনে বেঁচে থাকার রসদ পাওয়াটা তাঁদের কাছে খুবই মূল্যবান হয়ে উঠেছে।

পাশাপাশি, বিজেপির রাজনীতিতে বেশ কিছু ভুল পদক্ষেপের জন্য তাদের মাশুল গুনতে হল। গত দশ বছরে দেশের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে ঝুঁকলেও মানুষের ডাইরেক্ট বেনিফিট নিয়ে বড় কোনও পদক্ষেপ করেনি মোদী সরকার। তার ওপর উত্তরপ্রদেশে ও বাংলা সহ একাধিক রাজ্যে প্রার্থী নির্বাচন দলীয় প্রচারে বেশ কিছু ভুল পদক্ষেপ। সেই সঙ্গে সময়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সির ব্যবহার করে দুর্নীতি দমন না করে, শুধুমাত্র ভোটের সময় এজেন্সিকে ব্যবহার করে ভোট রাজনীতি ব্যুমেরাং হয়েছে বিজেপি-র কাছে। পশ্চিমবঙ্গে দলীয় স্তরে পুরনো কর্মীদের দীর্ঘদিন গুরুত্ব না দিয়ে ভূইঁফোড় নেতাদের অগ্রাধিকার ভালো চোখে নেয়নি দলের পুরনো নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা। একটি ভোটে অঞ্চল ভেদে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে এগুলি তাঁর অন্যতম বলে ধরা যেতে পারে।

Related posts

Leave a Comment