দুর্গাপুর: দুর্গাপুরে নৃশংসভাবে খুন হলেন বছর ২৬ বছরের মহিলা। মৃতের নাম রেখা মন্ডল। ওই মহিলার স্বামীর নাম সুভাষ মন্ডল। খুনের অভিযোগ উঠছে তার দিকেই। সে তার স্ত্রীকে মেরে ট্রাঙ্কের মধ্যে লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যায় বলে অনুমান করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার থেকেই রেখাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাঁদের ১০ বছরের ছোট্ট ছেলেটি নিজের অজান্তেই একাকি ওই ট্রাঙ্কের পাশে দুদিন কাটিয়ে ফেলে। অথচ বাচ্চাটি জানতেই পারেনি তার মা পাশে থাকা ট্রাঙ্কের মধ্যে থাকতে পারে। তারপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলায় টিভি দেখতে ঘরে বসতেই ছেলেটি পচা গন্ধ পায়। সে সঙ্গে সঙ্গে তার মামার বাড়িতে বিষয়টি জানায়। তারপর তাঁরা চারিদিকে খুঁজতে খুঁজতে রেখার বাবা ট্রাঙ্কের পাশ থেকে গন্ধ পাওয়ায় ট্রাঙ্কটি খোলেন। তিনি তাঁর নিজের মেয়ের পচাগলা দেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মৃত দেহটি উদ্ধার করে।
আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি তথাগত পাণ্ডে বলেন, মৃত ব্যক্তির পরিবার থেকে খুনের অভিযোগ করেছে। কিন্তু এখনই কিছু বলা যাচ্ছেনা যে, কিভাবে খুন করা হয়েছে। তবে শরীরে কোনওরকম আঘাতের চিহ্ন না থাকায়, ধারণা করা হচ্ছে শ্বাসরোধ করেই মেরে ফেলেছে অপরাধী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রেখার স্বামী সুভাষ মন্ডল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। সে প্রতিদিন প্রচণ্ড নেশা করে বাড়ি ফিরত। তাঁর বাড়ি দুর্গাপুরের ৮ নং ওয়ার্ডের পাওয়ার হাউস এলাকায়। সুভাষের মা সুনীতা মন্ডল বলেছিলেন, ‘সুভাষ আমার ছোট ছেলে। ও আমার মেজোছেলের শ্যালিকাকে বিয়ে করেছে। বেনাচিতিতে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করত। তাই দুজনেই সকাল বেলায় বেরিয়ে যেত। কিন্তু মঙ্গলবার বাড়ি ফিরতে রাত হওয়ায় বৌমাকে ফোন করলেও ফোন কেউ তোলেনি। এর আগে মঙ্গলবার সকালে ওদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। আমার ছেলে প্রতিদিন মদ খেয়ে বাড়িতে আশায় বৌমার সাথে প্রায়ই অশান্তি হত।’ পুলিশের অনুমান, ওইদিনই রেখাকে খুন করার ছকটা মনে মনে কষে ফেলে সে। তারপর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধ করে রেখাকে খুন করে। সুভাষ রেখার মৃত্যু নিশ্চিত করে দেহটি ট্রাঙ্কের মধ্যে ঢুকিয়ে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় দরজার কাছে রাখা রেখার জুতো দুটো নিয়ে পালায়। যাতে সকলে ভাবে দুজনেই কাজে বেরিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১১ বছর আগে তারা প্রেম করে বিয়ে করে। তদন্তকারীরা মনে করেন, এর আগেও দুই দুটো খুনের ঘটনা ঘটে। দুর্গাপুরের ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সমরেশ আর রাজিব যেমন প্রেমিকাকে খুন করে টুকরো টুকরো করে ফ্রিজের মধ্যে রেখেছিল, তেমনি সমরেশও মা মেয়েকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে ট্রলি ব্যাগে করে পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। ঠিক তেমন করেই সুভাষ মন্ডল তার স্ত্রীকে খুন করার একই পন্থা অবলম্বন করেছিল। যদিও ট্রাঙ্কটিকে টেনে বার করতে পারেনি। তাই সে নিজেই পলাতক। রেখার জা প্রতিমা মন্ডল বলেন, দেওর অত্যাচার করত বলে আমি এবং আমার শ্বশুর বাড়ির সকলে ওকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যেতে বললেও ও যেতে চায়নি। কারণ, ও তার স্বামীকে খুব ভালোবাসত। কিন্তু তার ভালোবাসার এই মূল্য দিল? আমরা সুভাষের যথাযোগ্য শাস্তি চায়।
previous post
next post