শনিবার রাজ নিবাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সিনিয়র আপ নেতা অতীশি দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও, লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনা তাদের শপথ নেওয়ার সাথে সাথে পাঁচজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীও শপথ নেন।মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সৌরভ ভরদ্বাজ, গোপাল রাই, কৈলাশ গেহলট এবং ইমরান হুসেনের মতো পরিচিত মুখগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং মুকেশ আহলাওয়াত একজন নতুন প্রবেশকারী।
বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পদত্যাগের পরিস্থিতিতে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। যিনি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন, তিনি বলেন যে, আগামী বছরের শুরুর দিকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দিল্লির মানুষের “সততার শংসাপত্র” পাওয়ার পরেই এই পদে ফিরে আসবেন।
এরপরই তিনি অতীশির নাম প্রস্তাব করেছিলেন এবং AAP বিধায়করা তার দলীয় সভায় অনুমোদন করেছিলেন। যেখানে তাঁকে নেতা হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
রাজ্যের মন্ত্রী, কর্পোরেট বিষয়ক এবং পূর্ব দিল্লির লোকসভা সাংসদ হর্ষ মালহোত্রা, দিল্লি বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেন্দর গুপ্ত, আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল, দিল্লির মেয়র শেলি ওবেরয়, আপ নেতা মণীশ সিসোদিয়া, বিজেপি সাংসদ মনোজ তিওয়ারি এবং আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
আবগারি দুর্নীতি মামলায় জামিন পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তারপর থেকেই চর্চা চলছিল, কেজরিওয়ালের ছেড়ে যাওয়া পদে কে বসবেন। শেষ পর্যন্ত ‘ভরসাযোগ্য’ আতিশীকেই মুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেয় আম আদমি পার্টি (আপ)। কেজরিওয়াল তিহার জেলে বন্দি থাকার সময় আতিশীকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেখা গিয়েছে। এদিন শপথ নেওয়ার পর নতুন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটাই কাজ—অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ফের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করা।
এর আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত ও বিজেপির সুষমা স্বরাজ। তাঁদের পর দিল্লির তৃতীয় মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হলেন আতিশী। একইসঙ্গে দিল্লিতে সবচেয়ে কম বয়সে এই দায়িত্বভার পেলেন তিনি। অতীশির নেতৃত্ব অত্যন্ত প্রত্যাশিত, কারণ তিনি এর আগে শিক্ষা, উচ্চ শিক্ষা এবং গণপূর্ত বিভাগ সহ কেজরিওয়াল সরকারের 10টিরও বেশি পোর্টফোলিও পরিচালনা করেছেন।
তিনি আগেই বলেছিলেন যে, এতে তিনি খুশি নন, কারণ তাঁর নেতা কেজরিওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। সেজন্যে মানুষকে তাঁকে অভিনন্দন না জানাতে বলেন।
কেজরিওয়াল আমাদের জীবন বদলে দিয়েছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী না হলে দিল্লির মানুষ আর বিনামূল্যে বিদ্যুত্, জল পাবেন না।’ আতিশী আরও বলেন, ‘বিজেপি কেজরিওয়ালকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। তাঁকে ভাঙতে সবরকম চেষ্টা করেছে। বিজেপিকে আর কোনও ষড়যন্ত্র করতে দেওয়া হবে না।’ শপথ নেওয়ার পর দপ্তর বণ্টনও করেছেন নয়া মুখ্যমন্ত্রী। জনস্বাস্থ্য কারিগরি, বিদ্যুত্, শিক্ষাসহ ১৩টি দপ্তর নিজের হাতেই রেখেছেন আতিশী। সৌরভ ভরদ্বাজ পেয়েছেন নগরোন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো আটটি দপ্তর। কৈলাস গেহলট পাঁচটি, গোপাল রাই তিনটি, মুকেশ আহলাওয়াত পাঁচটি ও ইমরান হুসেন দুটি দপ্তরের দায়িত্ব পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন যে, তিনি কাউকে দিল্লির কাজে বাধা দিতে দেবেন না এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ফিরিয়ে আনার দিকেও কাজ করবেন। প্রবীণ আপ নেতা আরও বলেন যে, তিনি আপ প্রধানের নির্দেশনায় কাজ করবেন।
গত সপ্তাহে কেজরিওয়াল বলেছিলেন যে, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করবেন এবং দিল্লি আবগারি নীতিতে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পরে জনগণের কাছ থেকে সততার শংসাপত্র পাওয়ার জন্য অগ্নি পরীক্ষায় সামিল হবেন।
কেজরিওয়াল দিল্লির আবগারি নীতি মামলায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরে এই ঘোষণা করেন এবং বলেন যে, এখন তিনি জনগণের সামনে যাবেন এবং কেবল তখনই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, যখন মানুষ তাঁকে ভোট দিয়ে জেতাবেন।
এদিকে আতিশীকে সবরকম সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিজেপি সাংসদ মনোজ তিওয়ারি। তবে আতিশীকে ‘ডামি মুখ্যমন্ত্রী’ বলে কটাক্ষ করেছেন দিল্লি বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেন্দর ভার্মা। বিজেপি মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালার বক্তব্য, ‘আসল ক্ষমতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের হাতেই থাকবে। আতিশী হলেন নতুন মনমোহন সিং।’ একাধিক বিজেপি নেতার দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কেজরিওয়ালের হাতে কোনও ক্ষমতা নেই। তাই তিনি পছন্দের লোককে মুখ্যমন্ত্রী করেছেন।