সংবাদ কলকাতা, ১৯ এপ্রিল: মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু রায় অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর বাবাকে অপহরণ করা হয়েছে। এই মর্মে তিনি পুলিশে লিখিতভাবে ‘নিখোঁজ’ ডায়েরি করেন। সোমবার এই ঘটনার পর জানা যায়, সন্ধ্যের বিমানে দিল্লিতে গিয়েছেন মুকুল রায়। এদিকে ছেলের অভিযোগ পেয়ে নড়ে চড়ে বসে রাজ্য পুলিশ। সেজন্য রাজ্য পুলিশের কর্তারা তড়িঘড়ি দিল্লিতে গিয়ে মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে মুকুল পুলিশকে জানান, তিনি ভালোই আছেন। নিজের ইচ্ছায় দিল্লিতে গিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি অপহরণের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তখন বিষয়টা পরিষ্কার হয়। তিনি চুপিচুপি ফের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে দিল্লিতে গিয়েছেন। একটি অডিও বার্তায় মুকুল রায় জানিয়েছেন, ‘আমি তো বিজেপিতেই আছি। আমি বিজেপির বিধায়ক। অমিত ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে আমার।’
এদিকে ছেলে শুভ্রাংশু রায় বাবার দিল্লি যাওয়ার খবর জানার পর বলেন, তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বিজেপি নেতা বাবাকে দিল্লি যেতে সাহায্য করেছেন। তিনি অসুস্থ ও মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি বলেন, বাবা যদি বিজেপিতে যোগ দেন, তাহলে তিনি সুস্থভাবে সেই কাজ করতে পারবেন না। শুভ্রাংশুর এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে উঠছে নানা প্রশ্ন। তিনি এই কথা কেন বলছেন, যে মুকুলবাবু বিজেপিতে যোগ দিলে সুস্থভাবে কাজ করতে পারবেন না? তিনি যদি মানসিকভাবে সত্যিই সুস্থ না থাকেন, তাহলে তৃণমূলে থেকে কাজ করবেন কিভাবে? তৃণমূলে ফেরার পর কেন এই কথা বলেননি শুভ্রাংশু? সূত্রের খবর, আসলে ছেলে শুভ্রাংশু চাইছেন না, তাঁর বাবা আবার বিজেপিতে যোগ দেন, সেজন্য আগাম সেই পথ বন্ধ করতেই এই সাফাই গেয়ে রাখছেন।
উল্লেখ্য, মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাক্তন রেলমন্ত্রী। সূত্রের খবর, নারদা কেসে জড়িয়ে যাওয়ার পর তিনি রেহাই পেতে বিজেপিতে যোগ দেন। এবং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি হন। তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনেক তৃণমূল নেতা, মন্ত্রী ও বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেন। রাজ্যজুড়ে দলে দলে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার একটা হিড়িক পড়ে যায়। গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে বিজেপির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মুকুলবাবু। বিধানসভা নির্বাচনে তিনি বিজেপির টিকিটে বিধায়কও নির্বাচিত হন। কিন্তু মমতা ফের ক্ষমতায় আসতেই পাল্টি খান মুকুল রায়। তিনি বিধানসভা ভোটের পর সপুত্র তৃণমূলে যোগ দেন। সেই যোগদান অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মমতা ও অভিষেক। অভিষেক নিজেই মুকুল রায়কে উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন। কিন্তু পাছে বিজেপি বিধায়ক পদ ছাড়তে হয়, সেজন্য তিনি প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। সেই মুকুল রায় পুনরায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
previous post