32 C
Kolkata
April 19, 2025
দেশ বাংলাদেশ

চিন্ময় প্রভুর গ্রেপ্তারে কড়া বার্তা ভারতের, ইউনূস সরকারের কাছে তিন দাবি ইসকনের

গ্রেপ্তারের পর আদালতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। ফাইল চিত্র

বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদী মুখ চিন্ময় প্রভুর গ্রেপ্তারে ক্ষুব্ধ গোটা বিশ্বের হিন্দু সমাজ। উদ্বিগ্ন ভারত বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশকে কড়া বার্তা দিয়েছে। চিন্ময় প্রভুর গ্রেপ্তার ও তাঁর জামিনে আপত্তি নিয়ে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছে। এই ঘটনাকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও বৈষম্যের একটি উদ্বগজনক প্রবণতা বলে উল্লেখ করেছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রচুর নথিভুক্ত ঘটনা রয়েছে। যার মধ্যে অগ্নিসংযোগ, বাড়িঘর ও ব্যবসায় লুটপাট, চুরি এবং ভাঙচুর রয়েছে। কট্টরপন্থীদের দ্বারা মন্দির ও দেবতাদের অপবিত্র করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যা দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করেছে।

বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে মোদী সরকারের বিদেশ মন্ত্রক। এদিকে এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মঙ্গলবার কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনের দপ্তরের সামনে ব্যাপক জমায়েত করে প্রবল বিক্ষোভ দেখিয়েছে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়। প্রসঙ্গত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং চিটাগাং পুন্ডরিক ধামের সভাপতি।

এদিকে ইসকনের বাংলাদেশ শাখা বিশিষ্ট হিন্দু নেতা ও ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোট’-এর মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সনাতনীদের বিরুদ্ধে পরবর্তী সহিংসতা ও হামলার জন্য মুহম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে একটি তালিকাও পেশ করেছে। এই ধর্মীয় সংগঠনটি একটি বিবৃতিও জারি করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার সম্পর্কে জারি করা এক বিবৃতিতে উপরোক্ত বিষয়গুলি এবং আরও অনেক বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছে ইসকনের বাংলাদেশ শাখা। সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোট “-এর মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সনাতনদের বিরুদ্ধে পরবর্তী সহিংসতা ও হামলারও নিন্দা জানাই। আমরা সরকারি কর্তৃপক্ষকে সনাতনী সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানাই।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই দেশের নাগরিক হিসাবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এবং সনাতনী সম্প্রদায়ের ন্যায়বিচার প্রাপ্য এবং আমরা জোর দিয়ে বলছি যে তাদের বিরুদ্ধে যে কোনও ধরনের বৈষম্য সহ্য করা উচিত নয়।’

বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মূলত তিনটি দাবি তালিকাভুক্ত করেছে ইসকনের বাংলাদেশ শাখা। এর মধ্যে রয়েছে সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা ও তাদের জবাবদিহি করা। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ও অন্যান্য সনাতনীদের নাগরিক অধিকার রক্ষা করা এবং দেশের সমস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য অবিলম্বে ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্যের মধ্যে একটি শীর্ষস্থানীয় সনাতনী সংগঠন হিসাবে, বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ চেতনা (ইসকন) হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্যরা সহ সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষার জন্য নিবেদিত।

আমরা ধারাবাহিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অন্যান্য নেতাদের প্রতি সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং সমাজে তাদের পূর্ণ ও সীমাহীন অংশগ্রহণের সুবিধার্থে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সরকার ও প্রশাসনকে এই উদ্বেগের সমাধানের জন্য সনাতনী সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

ইসকন সরকারকে বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশ আমাদের জন্মস্থান ও পৈতৃক বাসস্থান। আমরা এই দেশের নাগরিক হতে পেরে গর্বিত, যেখানে আমাদের অনেক আচার্য ও সাধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উভয় সরকারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সরকার ও কর্তৃপক্ষকে সকলের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং প্রতিটি নাগরিককে তাদের বিশ্বাস ও বিবেক অনুসরণ করে স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করার অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর সেদেশে নৈরাজ্য লেগেই রয়েছে। প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক হিংসা অব্যাহত রয়েছে। একদিকে যেমন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে, তেমনি ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে সে দেশের মৌলবাদী শক্তিগুলি একের পর এক সংখ্যালঘুদের ওপরও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। হিন্দুদের বাড়িঘর ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে মারধর কোনও কিছুই বাদ রাখেনি। প্রতিবাদে রাস্তায় নামে দেশের সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষজন। গত অক্টোবরে এরকমই একটি প্রতিবাদী আন্দোলনে নাম উঠে আসে ইস্কনের এক সাধুর। তিনি চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ওরফে চন্দন কুমার ধর। তিনি হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে একাধিক সমাবেশে যোগ দিয়ে বক্তৃতা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেন। তাঁর সেই প্রতিবাদ আন্দোলনকে সন্দেহের চোখে দেখতে থাকে। গত অক্টোবর মাসে এরকমই প্রতিবাদ আন্দোলনে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। অবশেষে সোমবার ঢাকা বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

Related posts

Leave a Comment