পারুল খামারিয়া: ২৮ শে ডিসেম্বর,গঙ্গাসাগর। কৃষকরা হলেন অন্নদাতা পিতা। কিন্তু সেই অন্নদাতা কৃষকদের পেটেই অন্ন নেই। ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা। ইতিপূর্বে অনেক আন্দোলন করেছেন কৃষকরা। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি তেমন। তাই ভারতীয় কিষাণ সংঘের পক্ষ থেকে কৃষকদের সংঘবদ্ধ করার জন্য ‘কার্যকর্তা প্রশিক্ষণ বর্গ’-এর আয়োজন ক’রে বিশেষ কৃষক বাহিনী গঠন করছে ভারতীয় কিষাণ সংঘ। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আজ ও আগামীকাল গঙ্গাসাগরে ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’-এর কার্যালয় ‘মাধব ভবন’-এ শুরু হল প্রশিক্ষণ বর্গ।
এই প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত হয়েছেন ভারতীয় কিষাণ সংঘের অখিল ভারতীয় সংগঠন মন্ত্রী দীনেশ কুলকার্নি, অখিল ভারতীয় কার্যকর্তা কল্যাণ কুমার মন্ডল; পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের সংগঠন মন্ত্রী অনিল চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক আশিস সরকার , প্রান্তের প্রচার প্রমুখ ও ‘ভারতীয় কিষাণ বার্তা’ পত্রিকার সম্পাদক মিলন খামারিয়া ও রাজ্যের অন্যান্য কার্যকর্তাবৃন্দ। পাশাপাশি এই বর্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলার সভাপতি ও সম্পাদক উপস্থিত হয়েছেন।
আজকের এই বর্গের শুরুতেই কিষাণ সংঘের পতাকা উত্তোলন করা হয়। উত্তোলন করেন শ্রী সরকার। তারপর ভগবান বলরাম ও ভারত মাতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন প্রান্তের কার্যকর্তাবৃন্দ।
শুরুতেই শ্রী মন্ডল বলেন, কৃষকরা ফসলের লাভকারী মূল্য পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক দল গুলো কৃষকদের কথা ভাবে না। তারা কৃষকদের আদতে ব্যবহার করে আসছেন। কৃষকরা সরকারি সুবিধাযুক্ত কম দামে সার পাচ্ছেন না। চাষের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এই সব কারণে অনেকেই কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে শহরে চলে আসছেন। কৃষকরা চাষবাস ছেড়ে দিলে মানুষ খাবে কী? সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে যাবে। তাই সবাইকে জাগরিত করার জন্য এবং ফসলের লাভকারী মূল্য পাবার জন্য কৃষকদের সংঘবদ্ধ হতে হবে। আমাদের সবাই মিলে এই কাজ করতে হবে।
শ্রী কুলকার্নি বলেন, অনেক সংগঠন তৈরি হয়েছে কৃষকদের জন্য কিন্তু তারা কৃষকদের সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। আগের অনেক কৃষক সংগঠন গুলো অরাজনৈতিক ভাবে কাজ করতে চেয়েও শেষ পর্যন্ত তারা রাজনৈতিক কাজে জড়িয়ে গেছেন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। আদতে কৃষকদের সমস্যার সমাধান কিছুই হয়নি। ভারতীয় কিষাণ সংঘ সম্পূর্ণ ভাবে অরাজনৈতিক একটি সংগঠন এবং ১৯৭৯ সালের ৪ ঠা মার্চ থেকে আমরা কাজ করে চলেছি অরাজনৈতিক ভাবেই। আমাদের সংগঠন কৃষকদের জন্য, কৃষকদের দ্বারা ও কৃষকদের স্বার্থেই পরিচালিত সংগঠন। আমরা দেশের কথা ভেবে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ভাবে লড়াই করে চলেছি কৃষকদের নিয়ে। কৃষকরা শুধু নিজের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মানুষের জন্য অন্ন উৎপাদন করেন, তা করোনা কালে আবার প্রমাণ করেছেন তারা। সেই অন্নদাতা কৃষকরা যাতে তার অধিকার বুঝে পান তার জন্য আমাদের সংগঠন কাজ করে চলেছে ও আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষক বাহিনী তৈরি করছি, যাতে তারা লড়াই করে নিজের অধিকার বুঝে নিতে পারেন।
আজকের এই প্রশিক্ষণ বর্গ সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদক আশিস সরকার বলেন, কার্যকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিলে তারা সংগঠন অনুসারে পরিচালিত হন। আমরা কৃষকদের সেই ভাবে তৈরি করছি, যাতে তারা নিজেদের উৎপাদিত ফসলের লাভকারী মূল্য গনতান্ত্রিক ভাবে আদায় করে নিতে পারেন।
প্রচার প্রমুখ মিলন খামারিয়া বলেন, ভারতীয় কিষাণ সংঘ আমাদের রাজ্যে ১৯৮২-৮৩ সাল থেকে কাজ করছে। সংগঠনের বিস্তার হচ্ছে ধীরে ধীরে। আরও অধিক অধিক মানুষ আমাদের সাথে হলে কৃষকদের দাবি গুলো দ্রুত আদায় করা সম্ভব হবে।