সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: বাংলা সংবাদপত্রের প্রবাদ প্রতিম সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্তের আজ ১৬তম প্রয়াণ দিবস। আজ এই দিনে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়। কুর্নিশ জানায় তাঁর নির্ভীক সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র পরিচালনার দূরদর্শিতা নিয়ে। আজ থেকে ১৫ বছর আগের ঘটনা। এই প্রতিবেদক ‘বর্তমানে’র ইন্টারনেট সংস্করণের সংবাদ কর্মী হিসেবে যোগ দেওয়ার মাস খানেক আগের ঘটনা। ২০০৮ সালের জুলাই নাগাদ কলেজ স্ট্রিটের এক অডিটোরিয়াম হলে রাজনাথ সিং-এর একটি সভায় মাসিক সংবাদপত্রের হয়ে সংবাদ সংগ্রহে হাজির। সেখানে উপস্থিত এক বিজেপি নেতা স্বপন মণ্ডল “স্মরণিকা” নামের একটি পুস্তিকা হাতে দেন। তিনি সেদিন সায়েন্স সিটিতে তাঁর স্মরণসভার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই বেশ কয়েকটি এই পুস্তিকা এনেছিলেন। যে বইটিতে বরুণবাবুর জীবন বৃত্তান্ত তথা কর্মজীবনের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। সেই বইয়ে উল্লেখ করা বরুণবাবুর একটি সতর্কবার্তা আজ বাংলার সংবাদ মাধ্যম তথা সংবাদ বিভাগের কর্মীদের ক্ষেত্রে খুবই প্রাসঙ্গিক। তিনি কোনও এক সময় বলেছিলেন, “কাগজ চালাতে কাপ্তানি, আর খবর লিখতে আতলামি করবে না।”
কিন্তু, সংবাদ জগতের বর্তমান প্রজন্ম এই সতর্কবার্তার ঠিক উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছে। সেই নির্ভীক ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন তো দূরের কথা, বরং বেতনভুক সাংবাদিকরা মাছি মারা কেরানির মতো স্বর্থান্বেষী মালিকের কথা শুনে শাসক দলের তাঁবেদারি করতে শুরু করেন। শাসকদল হাজার অপরাধ করলেও সবই ধোঁয়া তুলসীপাতা হয়ে যায়। স্বার্থপর মালিকের স্পষ্ট নির্দেশ থাকে, অমুক রাজনৈতিক দলের খবরগুলো যাবে, আর তমুক রাজনৈতিক দলের খবরগুলো যাবে না। যদিও যায়, সেটা উল্টো করে লিখতে হবে। অর্থাৎ তাদের ভালো কাজটাকে খারাপ কাজ বলে উল্লেখ করতে হবে।
শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইসব স্বার্থান্ধ মালিকরা প্রকৃত ধান্ধাবাজদের চিহ্নিত করতে অক্ষম। যার ফলে একবার কোনও কর্মী সেই অদূরদর্শী মালিকের ছত্রছায়ায় বলীয়ান হয়ে উঠলে, কিম্বা কোনও নাবালক মালিক (বয়সে সাবালক, অথচ বুদ্ধিতে নাবালক), যদি কোনও কর্মীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, সেই কর্মী দুদিনেই অফিসে দাদাগিরি করতে শুরু করে দেয়। বেচারা নাবালক মালিকও সেই কর্মীর সঙ্গে সুখ দুঃখের গল্প ভাগ করে নেওয়া থেকে শুরু করে, ইয়ার দোস্তের মতো আড্ডা ইয়ার্কিতেও মজলিশ হয়ে যান। যার দাপটে সৎ ও নিরীহ সংবাদ কর্মীদের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হয়। সিনিয়র থেকে জুনিয়র, সবাইকেই চাকরি ছেড়ে বিকল্প রাস্তা খোঁজা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। নিছক অর্থনৈতিক কারণে যাঁরা সেটা পারেননা, তাঁদের এই মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।
অফিসে হঠাৎ দাদা হয়ে যাওয়া সেই সংবাদ কর্মী উত্তর সম্পাদকীয়তে লিখতে শুরু করে, অমুক সরকার শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ খেয়েছে তো কী হয়েছে, এর আগের তমুক সরকারও এরকম দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। এটা কোনও দোষের নয়! মোদ্দা কথা, তার দাদাগিরি সংবাদ কর্মী থেকে গ্রামবাংলার সংবাদ পাঠক সবার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। যে কর্মী তাকে সেলাম ঠুকে “জো হুজুর” বলে, সে রাতারাতি যোগ্য ব্যক্তি হয়ে ওঠে। আর যিনি সেটাকে পাত্তা দেননা, তিনি অফিসে চরম অযোগ্য বলে পরিগণিত হন। আহাম্মক মালিকও তখন সেই কর্মীকে চরম অবজ্ঞার চোখে দেখতে শুরু করেন।
এদিকে বেচারা মালিকও বলতে শুরু করেন, বাঃ! দারুণ লিখেছো তো! এভাবে সেই কর্মীর অফিসের সুযোগ সুবিধা থেকে প্রভাব প্রতিপত্তি ক্রমশ বেড়েই চলে। তার মাইনেটাও ফাইভ ডিজিট থেকে একলাফে সিক্স ডিজিটের কাছে পৌঁছে যায়। এমনকি অফিস থেকে বিনা পয়সায় দেশ বিদেশ ভ্রমণেরও সুযোগ করে দেওয়া হয়।
previous post