27 C
Kolkata
August 1, 2025
রাজ্য

কর্মসংস্থান বাড়াতে দেশীয় পণ্যে অনুপ্রেরণা স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের

অরিত্র ঘোষ দস্তিদার, সিউড়ি, ২৮ শে মে: আজ শেষ হল ‘স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ ও স্বাবলম্বী ভারত অভিযান’-এর ‘মধ্যবঙ্গ প্রান্ত প্রশিক্ষণ ও বিচারবর্গ’। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবঙ্গ প্রান্ত থেকে ৮৪ জন কার্যকর্তা এখানে উপস্থিত ছিলেন। এই শিবির অনুষ্ঠিত হয় সিউড়ির ‘প্রভাত জ্যোতির্ময়ী কলেজে অফ এডুকেশন’-এ। এই প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ধনপতরাম আগরওয়াল, আইনজীবী কমল ঘোষ দস্তিদার, খাদি বোর্ডের পক্ষ থেকে পবিত্র সরকার, কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক আধিকারিক গোপাল আচার্য ও অধ্যাপক তুষার চক্রবর্তী।

গতকাল শুরুতে দেবকুমার বিশ্বাসের উদ্বোধনী সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। এরপর একে একে ভারত মাতা, মহাত্মা গান্ধী, দত্তপন্থ বাপুরাও ঠেংড়ি, পন্ডিত দীন দয়াল উপাধ্যায় ও বাবু গেনু-র প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন উপস্থিত অতিথিবৃন্দ।

তারপর বক্তব্য রাখেন স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের অখিল ভারতীয় সহ-সংযোজক ড. আগরওয়াল। যুবক-যুবতীদের স্বদেশী দ্রব্য উৎপাদন ও তা বিক্রি করে স্বাবলম্বী হবার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন – নতুন যারা উদ্যোগপতী হতে চান, তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা দরকার। তারা নিজেরা কিছু তৈরি করুক। নিজেরা উদ্যোগপতী হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করুক। তবেই দেশ এগোবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এদিন উপস্থিত ছিলেন অখিল ভারতীয় গ্রাহক পঞ্চায়েতের অখিল ভারতীয় কার্যকারিণী সদস্য কমল ঘোষ দস্তিদার। তিনি বলেন – যারা ক্রেতা তারা যদি স্বদেশী দ্রব্য কেনেন, তাহলে স্বদেশী দ্রব্যের চাহিদা বাড়বে। স্বদেশী পণ্য বেশি বিক্রি হলে দেশে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আর সেখানে বেকাররা কাজের সুযোগ পাবেন।

শ্রী পবিত্র সরকার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের খাদি বোর্ডের অধীনে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, আচার তৈরি, কেঁচো সার তৈরি, চরকা তৈরি প্রভৃতি প্রকল্প চলে। এই কাজগুলি করার জন্য কীভাবে ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়া যায়, কীভাবে তাতে ছাড় পাওয়া যায় – এই সব বিষয় প্রোজেক্টরের মাধ্যমে দেখান। পাশাপাশি, তিনি একটি পুস্তিকাও বিতরণ করেন সকলকে।

এরপর শ্রী গোপাল আচার্য FPO গঠন নিয়ে আলোচনা করেন। স্বাবলম্বী ভারত গড়তে গেলে কৃষকদের সংঘবদ্ধ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলো কীভাবে কৃষকদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে, সে বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন।

এরপর পরিবেশবিদ তুষার চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও তার অর্থনৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন। জীববৈচিত্র্য রক্ষা না পেলে আমাদের সবার বিপদে পড়বার সম্ভাবনা আছে বলেও তিনি জানান।

পরদিন অর্থাৎ আজ সকালে জৈব পদ্ধতিতে চাষ বিষয়ে আলোচনা করেন ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। গোবর সার, কেঁচো সার, নীম খোল, হাঁড়ের গুঁড়ো প্রভৃতি দিয়ে চাষের কথা জানান তিনি। পাশাপাশি জৈব পদ্ধতিতে ফসলের ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মারার কথাও বলেন।

এরপর ঋষভ সরকার ও অজয় ভোজপুরিয়া ‘স্বদেশী ইকোসিস্টেম’ নিয়ে আলোচনা করেন। ‘Ecosystem’ নামে একটি এপ্লিকেশন তৈরি করেছেন তারা। এই এপ্লিকেশনের মাধ্যমে কোথায়, কে, কী বিক্রি করছে, সে সম্পর্কে সহজে জানা যাবে বলেও জানান তাঁরা। অনেকেই এই এপ্লিকেশন গুগুল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করেন।

দু’দিনের এই শিবিরে ‘গটশা’তে অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জৈব চাষ ও পরিবার ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা করা হয়। উপস্থিত কার্যকর্তাদের বক্তা প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

এই শিবিরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের পূর্ব ক্ষেত্রের সহ-সংযোজক অম্লান কুসুম ঘোষ ও মধ্যবঙ্গ প্রান্তের প্রান্ত সংযোজক ডাঃ দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন মিলন খামারিয়া। এছাড়া বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ বাণী সরকার, আইনজীবী সুমন শ্রীবাস্তব, চিত্তপ্রিয় চট্টোপাধ্যায় ও আরও অনেক কার্যকর্তাবৃন্দ।

দু’দিনের এই শিবির সম্পর্কে শ্রী অম্লান জানান-“স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতে কর্মসংস্থানহীনতার অভিশাপ চেপে বসেছে। শুধু যে আমাদের দেশে এই সমস্যা আছে,তা নয়। সারা বিশ্ব জুড়েই কর্মসংস্থানের সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু যদি আমরা আজ থেকে দুই-আড়াই হাজার বছর আগের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখবো প্রাচীন ভারতে কোনো কর্মসংস্থানহীনতা ছিল না। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে কর্মসংস্থানহীনতার কথা কোথাও নেই।পৃথিবীর অর্থনীতির প্রায় ৪০% ছিল ভারতের দখলে। গনতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র নয়,তৃতীয় পথ বা নতুন পথে চলে ভারতের সব মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাই স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের লক্ষ্য। প্রাচীন ভারতীয় অর্থনীতির পথে চলে দেশকে পরম বৈভবশালী রাষ্ট্রে পরিনত করতে চাই আমরা।স্বদেশীর পথে চলে স্বাবলম্বী হতে চাই।”

শিবিরের শেষে নতুন দায়িত্ব ঘোষণা করা হয়। ডাঃ দীপঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্বাবলম্বী ভারত অভিযানের মধ্যবঙ্গ প্রান্তের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের মধ্যবঙ্গ প্রান্তের মতিলাল হেমব্রম-কে সহ সম্পর্ক প্রমুখ, নিবেদিতা পালকে মহিলা প্রমুখ ও লক্ষ্মণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

Related posts

Leave a Comment