সংকল্প দে, গঙ্গাসাগর: মঙ্গলবার সকাল থেকে উত্তাল সাগর থেকে সমুদ্র। আকাশে দুর্যোগের মেঘ। ব্লক প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে চলছে মাইকিং।
আবারও কি সুন্দরবন এলাকা প্লাবিত হতে চলেছে! ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে চলেছে এলাকার মানুষ। প্রশ্ন এলাকাবাসীর। প্রচন্ড বৃষ্টি যেন যাই যাই করেও যাচ্ছে না। ঘুরে ফিরে আবার আসছে। তার ফলে আতঙ্কের সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজন।
নিম্নচাপের জেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাজুড়ে দুর্যোগ অব্যাহত। রাতভর এক নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছে সমগ্র জেলাজুড়ে। এর মধ্যে সুন্দরবন উপকূলে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি। আজ সকাল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ খানিকটা কম থাকলেও নদী ও সমুদ্র উপকূলে বইছে ঝোড়ো হাওয়া।। মেঘাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে আকাশ। আজও সমুদ্র উত্তাল থাকায় নদী ও সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের।
অন্যদিকে দুর্যোগ মোকাবিলায় নবান্ন থেকে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, মহকুমা শাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে তৈরি থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের সব ব্লকে মাইকিং করে সতর্কতামূলক প্রচার শুরু হয়েছে। জেলার প্রতিটি ব্লক অফিসে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলি খুলে দেওয়া হয়েছে আগামী কয়েকদিনের জন্য। সুন্দরবন উপকূলের কাঁচাবাড়ির বাসিন্দাদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন তীরবর্তী এলাকাগুলিতে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে, “গঙ্গাসাগরের কপিলমুনি মন্দির সংলগ্ন ৫০০ মিটার মাটির নদীবাঁধে ভাঙ্গন। সমুদ্র উত্তল থাকার কারণে পর্যটকদের সমুদ্র নামার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ব্লক প্রশাসন।”
এছাড়াও পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে মাইকিং এর মাধ্যমে পর্যটক ও পুণ্যার্থীদের সতর্ক করা হচ্ছে। রাতে আরও জল বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে ব্লকে পর্যাপ্ত ত্রাণও মজুত রাখা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সুন্দরবনের দুর্বল নদী বাঁধগুলির ওপর নজরদারি চালাচ্ছে সেচ দফতর। বড় কোনও বিপর্যয় হলে দ্রুত জেলা ও রাজ্য প্রশাসনকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে জেলার সৈকত পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে আসা পর্যটকদের সমুদ্র ও নদীতে নামার ওপরেও মহকুমা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে বলেও জানা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন কুমার দাস বলেন, কোটাল ও সমুদ্র উত্তল থাকার কারণে গঙ্গাসাগরে কপিলমুনি মন্দির সংলগ্ন ২ নম্বর রাস্তা থেকে পাঁচ নম্বর রাস্তা পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার সমুদ্র সৈকতের মাটির নদী বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। ওই ফাটল থেকে সমুদ্রের জল এলাকায় প্রবেশ করছে। স্থায়ী কংক্রিটের নদীবাঁধ দিলে তবেই এই জল আটকানো সম্ভব হবে। গঙ্গাসাগরের কপিলমুনি মন্দিরের ভাঙ্গন রোধ করা না গেলে আগামীদিনে হয়তো কপিলমুনি মন্দির নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। নদী বাঁধ ভাঙ্গনের খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সুমতিনগর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিপিন পড়ুয়া। তিনি এসে উপকূলবর্তী এলাকায় যে সকল স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন সে সকল ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। পাশাপাশি, তিনি আরও বলেন, গোটা বিষয়টি সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা ইতিমধ্যেই রাজ্যের সেচ দপ্তরকে জানিয়েছেন। দ্রুততার সাথে ওই নদী বাঁধের কাজ শুরু করবে সেচ দপ্তর।
previous post