সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: অবশেষে দীর্ঘদিন পর চিটফান্ড মামলা নিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির দাবিকে মান্যতা দিল আদালত। সারদা (Sarada), রোজভ্যালি (Rose Valley), এমপিএস, টাওয়ারের মতো একাধিক বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে সব মামলাগুলিকে একত্রিত করে একই আদালতে শুনানির নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। এতদিন বিভিন্ন চিটফান্ড কেলেঙ্কারির মামলার শুনানি চলছিল ভিন্ন ভিন্ন আদালতে। এবার সেই মামলাগুলিকে একই এজলাসে এনে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর নির্দেশ দিল আদালত।
আদালতের নির্দেশ মেনে বিচার ভবনে সিবিআই আদালতে সমস্ত চিটফান্ড মামলার বিচার প্রক্রিয়া চালাতে হবে। এজন্য রেজিস্ট্রারকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
প্রসঙ্গত ২০১৩ সালে সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই-এর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায় সহ আরও বেশ কয়েকজন। এরপর রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুকে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। একে একে ছোটবড় একাধিক চিটফান্ড সংস্থার আর্থিক দুর্নীতি সামনে আসতে শুরু করে। ফলে এমপিএস, পিনকন, টাওয়ার, ত্রিভুবন অ্যাগ্রো, অমৃত প্রজেক্ট সহ বহু চিটফান্ড সংস্থা কেন্দ্রীয় এজেন্সির আতস কাঁচের তলায় চলে আসে। তাদের ওপর নেমে আসে ‘সেবি’-র নিষেধাজ্ঞা। ফলে বাজার থেকে তাদের টাকা তোলাও বন্ধ হয়ে যায়। বহু পলিসি ম্যাচুরিটির সময় হয়ে গেলেও এইসব সংস্থা লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দিতে অপারগ হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত চলাকালীন ও বিচারাধীন থাকার কারণে বহু সংস্থার সম্পত্তি ফ্রিজ করে দেয় ‘সেবি’।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ‘অমৃত প্রজেক্ট’-এর মতো একটি বিশ্বাসযোগ্য সংস্থার সম্পত্তি ফ্রিজ হয়ে যায়। তাদের মার্কেট থেকে টাকা তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে অমৃত প্রজেক্ট আমানতকারীদের ম্যাচিউরিটি পলিসির টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ করে দেয়। যে সংস্থার বাঁকুড়া ও আসামে ধানের তুষ থেকে বিদ্যুৎ তৈরির কারখানা ছিল। এছাড়াও তারা বিভিন্ন বায়ো প্রোডাক্ট উৎপাদন করত। সেই সংস্থার উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনার জন্য পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম সরকার চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এরাজ্যের বাম সরকারের একাধিক মন্ত্রীকে ‘অমৃত প্রজেক্ট’-এর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেও দেখা গিয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রীদের সেই সব ছবি দেখিয়ে এই সংস্থার এজেন্টরা আমানতকারীদের বিশ্বাস অর্জন করতো। অমৃতের এজেন্টরা সেইসব দেখিয়ে মার্কেট থেকে টাকা তুলত সেসময়।
এদিকে চিটফান্ড মামলার তদন্তে ঢিলেমির অভিযোগ ওঠে সিবিআই-এর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ তোলে তৎকালীন রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল সিপিএম। অন্যদিকে তৃণমূল দাবি করে, অধিকাংশ চিটফান্ড দুর্নীতি হয়েছে সিপিএম-এর আমলে। অথচ তাদের না ধরে সিবিআই বেছে বেছে তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তার করছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না। অন্য দলের অভিযুক্তদের এই মামলা থেকে রেহাই দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এমপিএস-এর কর্ণধার প্রবীর কুমার চন্দ্র সহ আরও ২ জন আদালতকে জানান, রাজ্যের ভিন্ন আদালতে অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ২৮ টি মামলা চলছে। যার তদন্ত প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সিবিআই। মামলাগুলি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় হওয়ার জন্য তদন্তে গতি আসছে না। তাঁদের দাবি ছিল, সমস্ত মামলা এক জায়গায় এনে বিচার করা হোক। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বুধবার বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে এবার সেই তদন্ত প্রক্রিয়া গতি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।