শঙ্কর মণ্ডল: বাংলার রাজনীতি এমনই এক নর্দমার পাঁকে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে, যা নিয়ে আলোচনা করা ভদ্রলোকের পক্ষে খুবই কঠিন। একদিকে অর্থকেই লক্ষবস্তু রেখে রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করছে, আর যার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে সব রকমের নৈতিকতা। আর অন্যদিকে এই রাজ্যে অবৈধ টাকা উদ্ধার যেহেতু দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে, সেহেতু অর্থনৈতিক তছরুপ নিয়ে যে ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
আজ অনুব্রত দিল্লিতে ইডির জেরার মুখে সবরকম ছল চাতুরীর পর এখন বাংলায় কথা বলা ছাড়া উনি অন্য কোনও ভাষা জানেন না বলে নতুন চাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন। এই রাজ্যের পুলিশ যেহেতু সম্পূর্ণ দলদাসত্ব ছাড়া আর কিছুই করতে জানেন না, আর যার ফলে শক্তিগড়ের ল্যাংচা কুঠিতে অনায়াসেই সহকর্মীদের সাথে মিটিং করতে কোনও অসুবিধা হয় না। রাজ্যের সব নেতারাই হুমকি ছাড়া আর কিছুই দিতে জানেন না। এমনকি অন ক্যামেরায় বিধায়ক ইদ্রিশ আলি যেভাবে জিভ কেটে নেওয়া ও হাত পা ভেঙে দেওয়ার কথা বলে। আর তার বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। অবশেষে মেলের মাধ্যমে ও আদালতে গিয়ে অভিযোগ জানাতে হয়। তারপরেও ইদ্রিশ আলির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে না পুলিশ প্রশাসন। একপ্রকার বলা যায়, এই রাজ্যের প্রশাসন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা একেবারেই অসম্ভব। আর এই পরিস্থিতিতে মেরুদন্ড সোজা রেখে চলা বিরোধী রাজনৈতিক নেতা একেবারে নেই বললেই চলে।
দলগত সেটিং-এর তত্ত্ব গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার চেয়ে উপযুক্ত বিরোধী নেতার অভাবই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। একসময় সিপিএম এবং কংগ্রেসের সমঝোতা শক্তিশালী থাকলেও মানুষকে বোঝানো যেত না। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি তাঁর শক্তিশালী পদক্ষেপের মাধ্যমে সিপিএম বিরোধিতাকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। কিন্তু আজ তাঁর সাম্রাজ্যে যে চরম অরাজকতা চলছে, তা কোনও সুস্থ গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
বিজেপির বিরুদ্ধে সেটিং তত্ত্ব খাঁড়া করে চলেছে সিপিএম, কংগ্রেস। কিন্তু আজ কৌস্তভ বাগচীর এই জোরালো প্রতিবাদের বিরুদ্ধে কংগ্রেস যেভাবে কৌস্তভকে থামাতে চাইছে, তা যে শক্তিশালী সেটিং, সেটা কি বলে দিতে হবে? এখন কৌস্তুভ কী করে, সেটাই দেখার। সত্যিই কি ও শিরদাঁড়া সোজা করে লড়াই চালাতে পারবে? তাহলে হয়তো আগামী দিনে পার্টি থেকে বিতাড়িত হয়ে টেলিভিশন ক্যামেরার আড়ালে চলে যেতে হবে। কারণ মিডিয়া রাজনৈতিক ব্যানার না থাকলে ওকে আর গুরুত্ব দেবে না। এটাই মিডিয়ার কাজ। বিজেপির মধ্যেও অন্যায় নির্দেশ মানতে বা পাপেট হতে না পারলে তাকে সাইট করে দেওয়া হয়। মিডিয়ার মাধ্যমে সস্তায় নেতা হওয়ার সুযোগ একেবারেই থাকে না। কিন্তু প্রকৃত যাঁদের মেরুদন্ড সোজা আছে, তাঁরা এর পরোয়া করেন না।
যাইহোক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রাখতে এই লড়াইকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
previous post