দিল্লি, ২ ডিসেম্বর— বিশ্ব এইডস দিবস ২০২৫ পালিত হল রবিবার, আর সেই উপলক্ষে প্রকাশিত পরিসংখ্যান জানাল এক বড় সাফল্যের ছবি। গত চৌদ্দ বছরে এইচআইভি সংক্রমণ কমেছে প্রায় অর্ধেক। ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে প্রতি বছর নতুন করে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার হার কমেছে ৪৮.৭ শতাংশ। একই সময়ে এইডস-জনিত মৃত্যুও কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে— মায়েদের ক্ষেত্রে ৮১.৪ শতাংশ এবং শিশুদের ক্ষেত্রে ৭৪.৬ শতাংশ।স্বাস্থ্যমন্ত্রকের প্রকাশিত জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, দেশে পরীক্ষা ও চিকিৎসার পরিধি গত কয়েক বছরে নজিরবিহীন ভাবে বেড়েছে।
২০২০-২১ সালে যেখানে এইচআইভি পরীক্ষা হয়েছিল ৪.১৩ কোটি, সেখানে ২০২৪-২৫ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৬২ কোটিতে। একই সময়ে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি বা এআরটি-র আওতায় চিকিৎসাধীন মানুষের সংখ্যা ১৪.৪৯ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮.৬০ লক্ষ। ভাইরাল লোড পরীক্ষা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৮.৯০ লক্ষ থেকে পৌঁছেছে ১৫.৯৮ লক্ষে। এই ধারাবাহিক উন্নতির ফলেই আক্রান্তের হার গত চৌদ্দ বছরে প্রায় ৪৯ শতাংশ কমেছে বলে জানাচ্ছে মন্ত্রক।সোমবার বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জগৎ প্রকাশ নাড্ডা। তিনি জানান, এইচআইভি প্রতিরোধ, চিকিৎসা, যত্ন এবং সামাজিক কলঙ্ক দূর করতে সরকার সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর কথায়, এইডস নিয়ন্ত্রণে ভারত আজ বিশ্বের কাছে এক অনুকরণীয় উদাহরণ। অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (এনএসসিও)-র উদ্যোগে।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন যুবসমাজের প্রতিনিধি, সরকারি আধিকারিক, প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মী এবং এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিরা।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এইডস নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ। পাশাপাশি ভাইরাল লোড পরীক্ষা নিশ্চিত করে যে রোগীর চিকিৎসা সঠিক পথে এগোচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভারত সরকারের বিস্তৃত চিকিৎসা-পরিকাঠামো, নিয়মিত পরীক্ষা, সচেতনতামূলক প্রচার এবং ভীতি-কলঙ্ক দূরীকরণের ফলে আজ এইডস-কে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।এইচআইভি এমন এক ভাইরাস, যা শরীরে প্রবেশ করলে ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। ফলে সাধারণ রোগও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। বহু দশক ধরে বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছেন, তবে এখনও কার্যকর প্রতিষেধক নেই। তাই সচেতনতা, পরীক্ষা এবং চিকিৎসাই এই লড়াইয়ের প্রধান হাতিয়ার।স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, এইডস নিয়ন্ত্রণে তিনটি স্তম্ভ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—
প্রথমত, যুবসমাজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি;
দ্বিতীয়ত, বৈষম্য এবং সামাজিক কলঙ্ক দূরীকরণ;
তৃতীয়ত, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ।
এর পাশাপাশি যৌন সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে একাধিক নতুন কর্মসূচী চালু করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
