প্রকাশ্যে নাচ-গানে যুগলের সাড়ে ১০ বছর কারাদণ্ড
সুভাষ পাল, সংবাদ কলকাতা: দিনের পর দিন আধুনিক মনস্ক সাধারণ মানুষের গণতন্ত্র বিপন্ন হচ্ছে ইরানে। অথচ গোটা বিশ্ব নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি সেদেশের তরতাজা এক যুগলের কারাদণ্ডে সেই স্বৈরাচারের ফের বহিঃপ্রকাশ ঘটল। বিনা অপরাধে ১০ বছর কারাদণ্ড হল ২০ উর্ধ দুই যুবক যুবতীর।
কিন্তু, কী করেছিলেন তাঁরা? যাঁর জন্য মৌলবাদী শাসনতন্ত্র দুই নিষ্পাপ যুবক যুবতীর জীবন ছারখার করে দিল? জানা গিয়েছে, ওই যুগলের নাম আমির মোহাম্মদ আহমাদি ও তাঁর বাগদত্তা আস্তিয়াজ হাঘিঘি। দু’জনেরই বয়স ২০-র কোঠায়। ওই যুগল একান্তে নাচ-গান করেছিলেন। তেহরানের আজাদি টাওয়ারের সামনে নাচের সময় আহমাদি তাঁর বাগদত্তাকে বাতাসে তুলে ধরেছিলেন। সেই ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এটাই তাঁদের অপরাধ। এরপরই তাঁদের ওপর নেমে আসে মৌলবাদী রাষ্ট্রযন্ত্রের খাড়া।
ইরানের পুলিশ গত নভেম্বরে ওই যুগলকে গ্রেপ্তার করে। এরপর আদালত তাঁদের মঙ্গলবার বিচারের পর ১০ বছর ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে। এমনকি তাঁদের ইন্টারনেট ব্যবহার ও দেশ ছাড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি (HRANA) এমনটাই জানিয়েছে।
যুগলের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে ওই মার্কিন নিজউ এজেন্সি। সেখানে তাঁরা বলেছেন, আদালতে কোনও আইনজীবী ছিল না ওই যুগলের। তারপরও বিচার প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। এছাড়া আবেদনের পরও তাঁদেরকে জামিন দেওয়া হয়নি। এদিকে হাঘিঘিকে গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছে কুখ্যাত মহিলা জেল কারাচাকে। কুখ্যাত এই কারাগারের বিরুদ্ধে অতীতে বারবার অভিযোগ উঠেছে। তারপরও তেহরানের বাইরে এই মহিলা কারাগারেই রাখা হয়েছে হাঘিঘিকে।
প্রসঙ্গত ইরান একটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র। সেজন্য সেদেশে জনসমক্ষে নাচ, গান ও নারী-পুরুষের প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সম্প্রতি সেখানে পোশাকবিধি ভঙ্গের দায়ে মাশা আমিনি নামে এক যুবতীকে পুলিশি হেফাজতে রেখে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ ওঠে। হিজাব না-পরার অপরাধে আমিনিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যার জেরে প্রাণ হারান ওই যুবতী। ফলে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা ইরান। আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে গণবিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ইরান। ঘটনার প্রতিবাদ স্বরূপ হিজাব ছাড়াই সেই সময় বিক্ষোভ দেখান মহিলারা।