শঙ্কর মণ্ডল: গণতন্ত্রের স্বাভাবিক নিয়মেই কর্ণাটকে একটি রাজনৈতিক দলের জয় হয়েছে। আর স্বাভাবিকভাবেই জয়ী দলের নেতারা তো বটেই, তথাকথিত রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অন্য সমস্ত রাজনৈতিক দল, পরাজিত দলকে মানুষ একেবারে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে আঁতলামি শুরু করে দেয়। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাই কর্ণাটকে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট এই নির্বাচনে অপরিবর্তিত থাকলেও মানুষের সমর্থন দূরে সরে গেছে বলে চিৎকার শুরু করেছে। কিন্তু ইতিহাস নিয়ে আলোচনার ন্যূনতম যোগ্যতা দেখাতে পারে না এরা। ভুলে গেলে চলবে না, এই রাজ্য থেকেই সমর্থন পেয়ে একসময় দেবগৌড়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এবং তার পার্টি এখনও বর্তমান। যাঁরা একসময় সমগ্র কর্ণাটকে দাপট দেখালেও এখন একটি বিশেষ এলাকার পার্টিতে পরিণত হয়েছে। যে পার্টি গত বিধানসভা নির্বাচনের থেকেও ৫ শতাংশ ভোট হারিয়েছে। আর সেই ভোটটাই চলে গিয়েছে কংগ্রেসের ঝুলিতে। তাই স্বাভাবিকভাবেই কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বিপুল আকার ধারণ করেছে।
যাই হোক, আসল কথায় আসা যাক। দীর্ঘ পরাজয়ের পর রাহুল গাঁন্ধী আজ জয় পেলেন। সাংবাদিকদের সামনে ভারতের রাজনীতির সবচেয়ে বড় মিথ্যাটা বলতে ভুললেন না। সেটা হল, তিনি এই জয়কে বললেন, এটা গরীব মানুষের জয়। আমি সব ইস্যু নিয়ে আলোচনার থেকে এই গরীব নিয়ে কথা বলাটাকেই আলোচনায় গুরুত্ব দিতে চাই। কারণ নির্বাচনী প্রচারে এবং তারপর জয়লাভে কৃতিত্ব যতই গরীবকে দেওয়া হোক না কেন, কার্যকালে কোনও দলই সরকার পরিচালনায় গরীবের স্বার্থ দেখে না। এমনকি দলীয় রাজনীতিতেও যত যোগ্যতাই থাকুক না কেন, অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হলে কোনও দলই তাকে গুরুত্ব দেয় না। আর তারফলেই রাজনীতিতে অর্থপিপাসু ভোগবাদী নেতাদের প্রভাব বাড়ে। আর তারাই ক্ষমতায় আসে। আর সেখান থেকেই জন্ম হয় সার্বিক দুর্নীতির। এই রাজ্যের সরকারের দুর্নীতি এখন আলোচনা করা খুবই কঠিন। কারণ এটা এখন একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপে পরিণত হয়েছে।
তাছাড়া এই রাজ্যে দুর্নীতির ইস্যুতে ভোট হবে কিনা বা হলেও তার প্রভাব পড়বে কিনা, সেটা সময় বলবে। তার নানান কারণ আছে। তার আগে কর্ণাটকে কংগ্রেসের সাফল্য ও বিজেপির পরাজয় নিয়ে বলতে গিয়ে এই দুর্নীতির কথাটাও না বলে পারা যায় না। কারণ ওখানে চল্লিশ শতাংশ কমিশনের ইস্যুটা মারাত্মক আকার ধারণ করে। তার সাথে পাইয়ে দেবার প্রতিশ্রুতিও একটা বড় কারণ। যা কর্ণাটকের নির্বাচনে কংগ্রেসের পক্ষে সমর্থন বাড়াতে সাহায্য করে। ঠিক এই রাজ্যের অর্থনৈতিক দেউলিয়াপনার পরেও একের পর এক পাইয়ে দেবার ব্যবস্থাই এই রাজ্যের সরকারের কর্মসূচী হয়ে গেছে।
এই সমস্ত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে একটা কথা বলতেই হয়, দুর্নীতি যদি সরকার পরিবর্তন করে, তাহলে এই রাজ্যের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু এই রাজ্যে যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল উপযুক্ত বিরোধী দলের অভাব। হ্যাঁ, সত্য যতই তেঁতো হোক, তা না খেলে অসুখ কখনো সারবে না। পশ্চিমবঙ্গে স্লোগান দেওয়ার ক্ষমতা, আদর্শগত যোগ্যতা অর্জন করা ছাড়া কোনও দল এগোতে পারে না।
বিজেপিতে একসময় তাত্ত্বিক নেতা ও কর্মীর সমৃদ্ধ অবস্থা ছিল। ভোটের সাফল্য নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। কারণ, এটা রাজনৈতিক গবেষণা করার ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ ছাড়া কেউ বুঝবে না। এই মুহূর্তে শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার কোনও নেতা নেই।আর শমীক ভট্টাচার্য ছাড়া উপযুক্ত বিবৃতি দেওয়ার ক্ষমতা কারোর নেই। আসলে ক্লাস সংগঠনের প্রশিক্ষণটাই এখন বন্ধ হয়ে গেছে। লোকদেখানো কিছু প্রশিক্ষণ বিচ্ছিন্নভাবে হলেও সেখানে যাঁরা প্রশিক্ষণ দেয়, তাঁদের নিজেদেরই অনেক শেখা বাকি আছে। যাঁরা এগুলো করতে পারতো, তারা বিতাড়িত। শুভেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মজুমদাররা তাঁদের চেনেও না। আর চেনার কথাও নয়। এরা টেলিভিশনের মাধ্যমে নেতা হয়নি বা বর্তমান নেতাদের কাছে গিয়ে লেজও নাড়বে না। আসলে বিজেপির রাজনীতির ঘরানাও আলাদা।