29 C
Kolkata
April 15, 2025
জেলা

আদিবাসী মহিলাকে ধর্ষনের অভিযোগ ফাঁসিদেওয়ায়

ফাঁসিদেওয়া, ২৯ জুলাই: একের পর এক আদিবাসী মহিলার উপর ধর্ষণ সহ নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে বহুদিন ধরে। তেমনিই আবারও এক আদিবাসী গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ালো শিলিগুড়ি মহাকুমা পরিষদের অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বানেশ্বর জোত গ্রামে। জানা যায় গত ১৮ তারিখ মঙ্গলবার রাত একটা নাগাদ এলাকার এক যুবক ঘরের ভিতরে ঢুকে ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে। যুবকের নাম তাহিরুল হক। জানা গিয়েছে, ফাঁসিদেওয়া চুনিয়াটুলির সামিয়া বেগমের সাথে বানেশ্বর জোত গ্রামের ভরত হেমব্রমের অবৈধ সম্পর্কের জেরে তারা দেড় বছর আগে পালিয়ে বিয়ে করে। এর পর থেকেই ভিন রাজ্যে কাজ করত তারা। গত তিন মাস আগে ভরত তার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছে। এরপর থেকেই প্রতিনিয়ত এলাকার ওই যুবক তাহিরুল হক রাতের অন্ধকারে বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করত। এর আগেও বহুবার তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। ঐদিন রাত্রে তারা খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এরপর ওই যুবক রাতে তাকে ধর্ষণ করে। রাতেই এলাকার পঞ্চায়েত সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের জানানো হয়। এরপরে মারধরও করা হয় ওই যুবককে। পরের দিন ওই গৃহবধূ ও তার স্বামী ভরত হেমব্রম মিলে ফাঁসিদেওয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সূত্রের খবর, বুধবার ফাঁসিদেওয়া থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, কয়েকদিন কেটে গেলও প্রশাসনের তরফ থেকে তারা কোন সহযোগিতা পাননি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে ছয় দিন পরে পুলিশ সেই গৃহবধুর মেডিকেল টেস্ট করা জন্য বলে।

অন্যদিকে, তাহিরুল হক হাসপাতালে ভর্তি থাকায় এলাকার স্থানীয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মিন্টু সাহা ধর্ষিতা আদিবাসী পরিবারের উপরে অভিযুক্ত তাহিরুলের চিকিৎসার খরচের জন্য টাকা দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ করা হয় ধর্ষিতার পরিবারের পক্ষ থেকে। তাহিরুলের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছেন তারা। অন্যদিকে ধর্ষিতার কাকীমা কিস্টিনা কিস্কু জানান ১৮ তারিখ রাত প্রায় ১ টা নাগাদ অভিযুক্ত তাহিরুল হক সামিয়াকে ধর্ষণ করে। চিৎকার শুনে আমরা দৌড়ে আসি এবং তাকে তাড়িয়ে দিই। কিন্তু পরবর্তীতে সে আবার আমার বৌমাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। আমরা পরের দিন থানায় লিখিত অভিযোগ করি। কিন্তু ছদিন পরে আমাদের রিসিভ কপি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য আমাদের থেকে টাকার দাবি করছে তাহিরুলের চিকিৎসার জন্য। আমরা কোথা থেকে পাব। গরিব মানুষ, দিন আনি দিন খাই। অভিযুক্তর তাহিরুলের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করছি।

প্রসঙ্গত, এই খবর পেয়ে ওই আদিবাসী পরিবারের সাথে এদিন দেখা করতে আসেন দার্জিলিং জেলার বিজেপির সাংগঠনিক সভানেত্রী শিখা মৈত্র। ফাঁসিদেওয়া বিজেপি মন্ডল সভাপতি বিশ্ব দীপা ঘাটানি, রিতা রায়, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পলি সাহা সহ বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রীরা। শিখা মৈত্র সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান প্রতিনিয়ত পশ্চিমবঙ্গের নারীরা অত্যাচার ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গে নারীর সুরক্ষা কোথায়? প্রতিনিয়ত আদিবাসী মহিলাদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। শুধু মনিপুরের ঘটনা নিয়ে পড়ে থাকলেই চলবে না। আজ অত্যন্ত গ্রামে এক মহিলা রাতের অন্ধকারে তার বাড়িতে সুরক্ষিত নয়। প্রশাসন নিরব কেন। অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল শাসিত পঞ্চায়েত সদস্য ধর্ষিতার বাড়িতে এসে টাকা দাবি করছে। অবিলম্বে এই ধর্ষন কান্ডে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে তার কঠিন শাস্তি দাবি করছি। যদি এই মহিলা বিচার না পায় তাহলে আগামীতে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো। পাশাপাশি এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য মন্টু সাহা জানান, ঘটনার দিন রাতে আমায় ফোন করা হয়েছিল পরিবারের পক্ষ থেকে। পরের দিন আমি গিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। তবে অভিযুক্ত বর্তমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তাই গ্রামের ব্যাপার গ্রামেই মিটিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল পরিবারকে।

Related posts

Leave a Comment