31 C
Kolkata
April 16, 2025
দেশ বাংলাদেশ বিদেশ

আওয়ামী লীগের প্রশংসা করে হাসিনাকে দেশে এনে জেলে ভরার নতুন পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের

সংবাদ কলকাতা: ঘরে বাইরে প্রবল চাপের মধ্যে সুর বদলাচ্ছে বাংলাদেশের নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকার। এবার আওয়ামী লীগের প্রশংসা করে হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরার আহবান জানাল ঢাকা। এক বার্তায় ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, ‘আওয়ামি লিগের অবদান অনস্বীকার্য’, দেশে ফিরে আসুন হাসিনা। হঠাৎ কেন এই সুর বদল? কারণ, একদিকে দেশে সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক হিংসা, লুঠতরাজ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের জেরে সারা বিশ্ব ক্ষুব্ধ। ব্রিটেন, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ হচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তাঁরা ন্যায় বিচার দাবি করছে। ফলে ক্রমাগত আন্তর্জাতিক চাপ, অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি দেশের সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। যেসব গরিব ছাত্র এবং নাগরিকরা একসময় নতুন স্বাধীনতা বলে দাবি করছিল, তারা এবার সুর বদলাচ্ছে।

এতদিন যে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামি লিগ ছিল ‘দেশের শত্রু’, সেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীই এখন স্বাগত নতুন রাষ্ট্রে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ গঠনে আওয়ামি লিগ এবং বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের অবদান হঠাৎই স্মরণ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সম্প্রতি বিএনপি ভারত সরকারকে আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে হুমকি পাল্টা কড়া হুঁশিয়ারি দেয় মোদি সরকার। একটি লিখিত বার্তায় দিল্লি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে চিঠিতে জানায়, হাসিনার নিরাপত্তা তাঁদের কাছে অগ্রাধিকার। তিনি যতদিন ভারতে থাকতে চাইবেন, ততদিন ভারত তাঁর উপযুক্ত নিরাপত্তার সঙ্গে আশ্রয় দেবে। শুধু তাই নয়, অন্য কোনও দেশ আশ্রয় দিতে চাইলেও সেই দেশে হাসিনার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে পাঠানো হবে না বলেও জানিয়ে দেয় মোদি সরকার।

প্রসঙ্গত সোমবার স্বয়ং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উপদেষ্টা তথা প্রাক্তন সেনাকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম শাখাওয়াত হোসেনের দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আহ্বান, ‘শেখ হাসিনা, আপনি ফিরে আসুন। এটা আপনার দেশ। আপনি আসছেন না কেন? নাগরিকত্ব তো যায়নি! স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছেন, স্বেচ্ছায় ফিরে আসুন, পার্টি গোছান, নির্বাচনে অংশ নিন। একটা রাজনৈতিক দল যা করে। এই পার্টির (আওয়ামি লিগ) অনেক অবদান আছে বাংলাদেশে। এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। ভালো থাকবেন, আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি।’ কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামি লিগ বিরোধী বাতাবরণের মাঝে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এহেন ভোলবদল কেন? এই প্রশ্নে এখন তোলপাড় সীমান্তের দুই পার। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে একাধিক স্তরে বিষয়টি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ দুষ্টের ছলের অভাব হয়না। হাসিনা দেশে ফিরলে অন্তর্বর্তী সরকার তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ এনে যে জেলে ভরবে না, তার কি নিশ্চয়তা আছে?

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন পর্বে বাংলাদেশের উপদেষ্টারা ভারত বিরোধিতার যে পর্যায়ে ছিলেন, তা থেকে তাঁরা ক্রমেই সরে আসছেন। তার প্রমাণ মিলেছে তাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হাসনের কথাতেও। এদিন তৌহিদ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, ‘হাসিনা ভারতে থাকলেও, দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেক বড় বিষয়, এটি স্বার্থের সম্পর্ক। বন্ধুত্বও স্বার্থের জন্য। স্বার্থ বিঘ্নিত হলে বন্ধুত্ব টেকে না। ভারতের স্বার্থ আছে, বাংলাদেশেরও রয়েছে।’ তৌহিদের কথায়, ‘আমরা দু’পক্ষই স্বার্থ বজায় রাখব, চেষ্টা করব সুসম্পর্ক বজায় রাখার।’

সূত্রের খবর, বেশ কয়েকমাস ধরে নির্বাচিত হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা চালাচ্ছিল বিএনপি ও জামাত সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। কিন্তু তার কৌশল হিসেবে প্রশাসনিক মহলে দুর্নীতিকে প্রচারে সম্বল করে তলে তলে বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতাকে উস্কানি দিতে শুরু করে। যার ফলস্বরূপ প্রবল আন্দোলনের জেরে ছাত্রদের কোটা সংস্কারের দাবি মেনে সুপ্রিম কোর্ট ৯৩ শতাংশ সংরক্ষণ তুলে দিলেও ছাত্ররা আন্দোলন বন্ধ করেনি। কোনও এক গোপন শক্তির ইন্ধনে ছাত্ররা পুনরায় আন্দোলনের সুর চড়ালে দেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে ছাত্রদের ভূমিকা নিয়ে নানা সংশয় তৈরি হয়। কারণ, ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যে শুধু ছাত্ররাই নয়, সিংহভাগ বহিরাগত প্রবেশ করে আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে শুরু করে। এই বহিরাগত শক্তি কারা? তাদেরকে কারা মদত জুগিয়েছে? বিএনপি? জামাত? নাকি পাকিস্তানি কোনও মৌলবাদী শক্তি? নাকি এদের সম্মিলিত শক্তি? না হলে আন্দোলনের নামে ছাত্ররা কেন জাতীয় ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নষ্ট করতে শুরু করে? হাসিনা পদত্যাগের পরে কেন গণভবনে চুরি হল? সেখানে সবাই তো ছাত্র ছিল না? বহিরাগত ও মাঝবয়সী, এমনকি বয়স্ক লোকদেরও গণভবন থেকে জিনিসপত্র নিয়ে চলে যেতে দেখা গেছে। এটাই কি বাংলাদেশের তথাকথিত প্রতিবাদী ছাত্রদের আন্দোলনের মোটিভ? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তা না হলে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের পরেই কেন দেশজুড়ে নিষিদ্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি জামাত শিবির মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। একের পর এক হিন্দুদের খুন, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর শুরু করল? সাম্প্রদায়িক হিংসার দাপটে কলঙ্কিত হল ছাত্র আন্দোলন?

আওয়ামি লিগ সভানেত্রীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পরামর্শ—‘ব্যক্তিগত স্বার্থে এত বড় একটা দলকে নষ্ট করবেন না। আওয়ামি লিগের প্রতি আমি ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধাশীল। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’এর গণআন্দোলন এবং ৭১’এর স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক অবদান আছে এই দলের। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এটা। তাঁর নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, স্বাধীনতা এসেছে। এটা বাংলাদেশের সম্পত্তি। এই দল নষ্ট করার কোনও অধিকার আপনার নেই।’

হাসিনাকে বাংলাদেশের রাজনীতির মূল স্রোতে ফিরে আসার এই আহ্বানের সঙ্গেই প্রাক্তন সেনাকর্তার হুঁশিয়ারি—‘পার্টি গোছান, লোক জড়ো করেন, যাই করেন না কেন, কাউন্টার রেভল্যুশনের (প্রতিবিপ্লব) মতো এমন কিছু করবেন না, যাতে আপনাদের জীবন বিপন্ন হয়। গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করবেন না। পাকিয়ে কোনও লাভও হবে না। বরং মানুষ আবার খেপে উঠবে।’

যদিও এই উল্টো সুর প্রকাশ্যে আসা মাত্র বিরোধিতায় তৎপর হয়ে উঠেছে জামাত শিবিরের লোকজন। সমাজমাধ্যমে ‘গালমন্দ’ শুরু হয়েছে প্রাক্তন সেনাকর্তার নামে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিরোধী এই প্রচারে সবচেয়ে সক্রিয় প্যারিসে নির্বাসিত আইএসআইপন্থী পিনাকী ভট্টাচার্য। শাখাওয়াত হোসেনের সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হতেই তাঁকে দালাল অ্যাখ্যা দিয়ে পিনাকীর পোস্ট—‘দেখছেন তো, আমি মানুষ চিনতে ভুল করি না।’

এরপর বিকেলে ফের সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্ট—‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শাখাওয়াতকে হটান। এই মুহূর্তে সে নিজেই প্রতিবিপ্লবী।’ এই পর্বেই চরম ভারত বিদ্বেষী বলে পরিচিত পিনাকীর একের পর এক ভিডিও পোস্ট নিয়ে বিব্রত বাংলাদেশ সরকার ‘ইউটিউব’ কর্তৃপক্ষকে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানায়। বাংলাদেশ সরকারের টেলি কমিউনিকেশন রেগুলেটারি কমিশনের আর্জির ভিত্তিতে এদিনই ইউটিউব কর্তৃপক্ষ ‘ব্লক’ করে দেয় পিনাকীকে। তাঁকে বলা হয়, ‘যে সমস্ত পোস্ট রয়েছে, মুছে ফেলুন, অন্যথায় ডিলিট করে দেওয়া হবে।’

Related posts

Leave a Comment