28 C
Kolkata
June 25, 2025
রাজ্য

অসুস্থ বাবা-মা-কে ছেড়ে যাওয়ার জন্য স্বামীকে চাপ দেওয়া ‘মানসিক অত্যাচার’: হাইকোর্ট

সংবাদ কলকাতা: অপরাধী শুধুই ছেলেরা, মেয়েরা(Women) ধোঁয়া তুলসীপাতা। এই ধারণার এবার বদল হতে চলেছে। ধর্ষকেরা শুধুই পুরুষ, মেয়েরা কি মিথ্যা কথা বলে না! আন্তর্জাতিক নারী দিবসের(International Womens Day) মুখে এই ধারনাতেই বড় ধাক্কা দিল কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court)। দাম্পত্য সম্পর্কে মানসিক অত্যাচারের সংজ্ঞা নির্ধারণে বিভিন্ন সময় একাধিক রায় দিয়েছে দেশের বিভিন্ন আদালত। এবার তাতে যুক্ত হল নতুন মাত্রা।

সম্প্রতি বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত একটি মামলার(Divorce Case) রায়ে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, অসুস্থ বাবা-মাকে ছেড়ে স্বামীকে অন্যত্র থাকতে বলা মানসিক অত্যাচারের শামিল। শুধু তাই-ই নয়, এমন কার্যকলাপ আইনত বিচ্ছেদের কারণ। অতএব মেয়েরা সাবধান হও। তোমরাও কিন্তু এবার আদালতের র‍্যাডারে চলে এসেছ। মেয়ে বলেই সব কিছুতে ছাড় পাবে না।

সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট(Kolkata High Court)-এর বিচারপতি সৌমেন সেন ও উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ একটি মামলার প্রেক্ষিতে এমনই রায় দিয়েছে। আদালত তার রায়ে জানিয়েছে, অসুস্থ মা-বাবাকে ছেড়ে স্বামীকে অন্যত্র থাকতে বলা একটি মানসিক অত্যাচার। স্ত্রীর এমন কার্যকলাপ আইনত বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এপ্রসঙ্গে উঠে আসে বারাসতের বাসিন্দা এক দম্পতির মামলার প্রসঙ্গ।

জানা গিয়েছে, ২০ বছর আগে কল্পনা সরকারের সঙ্গে (নাম পরিবর্তিত) বিবাহ হয় বারাসতের অরূপ সরকারের (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন পর থেকে শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের মেনে নিতে পারছিলেন না কল্পনা। শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলা লেগে থাকত তার। আদালতে অরূপ দাবি করেন, অসুস্থ বাবা-মাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য চাপ দিতেন স্ত্রী। কিন্তু কল্পনার সেই প্রস্তাব মেনে নিতে পারেননি স্বামী অরূপ। ২০০৭ সালে তাদের এক কন্যা সন্তানেরও জন্ম হয়। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই তুমুল ঝামেলার পর মেয়েকে নিয়ে দমদমে বাপের বাড়িতে চলে আসে কল্পনা। অনেক চেষ্টা করেও স্ত্রীকে ফেরাতে পারেননি অরূপ।

বাধ্য হয়ে তিনি বারাসত আদালতে দাম্পত্য অধিকারের দাবি করে মামলা দায়ের করেন। আদালত তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্ক শুরু করার পক্ষে মত দেয়। এদিকে স্ত্রী কল্পনা জেলা জন অভিযোগ নিরসন কেন্দ্রে শ্বশুর বাড়িতে ফেরার পক্ষে মত দেন। কিন্তু তিনি ফেরেন নি। উলটে তিনি গার্হস্থ্য হিংসা আইনে মামলা করেন। এর ফলে স্বামীর দায়ের করা দাম্পত্য অধিকার সংক্রান্ত মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।

স্বামী অরূপ ফের মানসিক অত্যাচার ও পরিত্যাগের অভিযোগে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন। বারাসত আদালতে সেই মামলার দীর্ঘ শুনানির পর স্বামী অরূপের পক্ষে রায় দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট-এর দ্বারস্থ হন কল্পনা। সেখানে তিনি মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

হাইকোর্ট উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ফের স্বামী অরূপের পক্ষে রায় দেয় বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালত জানায়, “অসুস্থ বাবা-মাকে ছেড়ে স্বামীকে অন্যত্র থাকতে বলা মানসিক অত্যাচার।” নিম্ন আদালত এই মামলায় বিবাহ বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিয়ে সঠিক পদক্ষেপই করেছে। কথা দিয়েও দাম্পত্য সম্পর্ক শুরু না করার পিছনে স্ত্রীর কাছে কোনও বৈধ যুক্তি নেই।

Related posts

Leave a Comment