অযোধ্যা: আদবানি ও বাজপেয়ির সময়ে শুরু হওয়া আন্দোলন আজ মোদির হাত ধরে স্বীকৃতি পেল। প্রতিষ্ঠিত হল রামমন্দির। প্রতিমায় প্রাণের প্রতিষ্ঠা পেলেন রামলালা। আর সেই মন্দির উদ্বোধন করে ভক্তদের হাতে সঁপে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এভাবেই পুনরায় অযোধ্যায় প্রতিষ্ঠিত হল রাম রাজ্য। অবসান ঘটল এক ঐতিহাসিক অন্যায়ের।
২২ জানুয়ারি সোমবার, সম্পূর্ণভাবে সেজে উঠেছিল রাম মন্দির। যথা সময়ে নবগঠিত রাম মন্দিরে এলেন প্রধানমন্ত্রী। গোটা ভারতের হিন্দু সমাজের মানুষের প্রাণ যেখানে প্রোথিত আছে, সেখানে নতুন করে তৈরি রামের শৈশবের মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হল নতুন করে। যজমানের কাজ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং।
মন্দির চত্বরে তখন হাজার অতিথি, অভ্যাগতরা। কে নেই সেখানে! বলিউডের প্রথম সারির তারকা থেকে শিল্পপতি, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ক্রিকেটার, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। ঐতিহাসিক প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময়ে দেশের সকল প্রধান আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। হিন্দু ধর্মের অন্যতম শ্রদ্ধেয় দেবতা, ভগবান রামের জন্মস্থান বলে বিশ্বাস করা অযোধ্যার বিশাল মন্দিরে অনুষ্ঠানের জন্য ৮০০০-এরও বেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সময়মতো মন্দিরে পৌঁছে যান ক্রিকেটার সচিন টেন্ডুলকর, বলিউড শাহেনশা অমিতাভ বচ্চন ও পুত্র অভিষেক বচ্চন, রজনীকান্ত, জ্যাকিশ্রফ, সঙ্গীত শিল্পী সোনু নিগম সহ বিশিষ্টরা। এছাড়া আমন্ত্রিতদের তালিকায় ছিলেন ক্যাটরিনা কাইফ, ভিকি কৌশল, আলিয়া ভাট, রণবীর কাপুর সহ প্রথম সারির তারকারাও।
দুপুর ১২টা ২০ নাগাদ প্রাণ প্রতিষ্ঠার মূল কার্যক্রম শুরু হয়। ৮৪ মিনিটের সেই কার্যক্রমে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর সাষ্টাঙ্গে ভগবান রামের শৈশব মূর্তিকে প্রণাম করেন। এরপর তাঁকে প্রদক্ষিণ করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেলরা। ওদিকে বলিউডের খ্যাতনামা তারকারা মন্দিরের দর্শকাসনে বসে জায়ান্ট স্ক্রিনে এই মেগা অনুষ্ঠানের লাইভ দেখলেন।
প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় বৈদিক আচার মেনে মূর্তিকে শোধন করা হয়। এরপর বস্ত্রের অবগুন্ঠন খুলে প্রথমবার চক্ষু উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে মন্দির প্রাঙ্গণে আকাশ থেকে পুষ্প বৃষ্টি করা হয়। অনুষ্ঠানের সময় ভক্ত ও বিশেষ অতিথিদের দ্বারা “জয় শ্রী রাম” স্লোগানে মন্দির প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে যায়। তবে এদিনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি লালকৃষ্ণ আদবানি। তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর মন্দির চত্বরে ভাষণ দেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত ও প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদী ভাষণের শুরুতে বলেন, “নতুন ইতিহাসের সূচনা করল দেশ। বহু শতাব্দীর অপেক্ষার পর রাম আমাদের কাছে এলেন। রাম আর তাঁবুতে নয়, মন্দিরে থাকবেন। আজ ২২ জানুয়ারি নতুন কালচক্রের সূচনা হল। আমাদের ত্যাগ, তপস্যার খামতি ছিল। বহু শতাব্দী সময় লেগে গেছে। ভগবান রাম নিশ্চয় আমাদের ক্ষমা করবেন। এই রামমন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে বহু আইনি লড়াই চলেছে। ন্যায় বিচারের জন্য বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। শ্রীরামের আদর্শ, মূল্য, শিক্ষা সর্বত্র সমান। আজ বিজয়ের নয়, বিনয়ের দিন। রামমন্দির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক। গর্ভগৃহে ঐশ্বরিক চেতনার সাক্ষী হলাম। রামমন্দিরের ভূমিপুজোর পর থেকে প্রতিদিন, গোটা দেশে উৎসাহ বাড়তে শুরু করেছিল। নির্মাণকাজ দেখে দেশবাসী প্রতিদিন একটু একটু করে নতুন বিশ্বাস নিয়েছিলেন। সেই ধৈর্যের ফসল শ্রীরামের এই মন্দির। বন্দিদশা ভেঙে উঠে দাঁড়িয়েছি আমরা। অতীতের সেই সময় থেকে সাহস পেয়েছি আমরা। নতুন ইতিহাসের সৃজন হয়েছে। হাজার বছর পরও মানুষ এই তারিখের চর্চা করবেন।’’