সোমবার সকালে নিউটাউন ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণে আসেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি তথা সাংসদ শ্রী দিলীপ ঘোষ। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর বক্তব্য।
প্রশ্ন: পঞ্চায়েত নির্বাচনে কমিশনের 144 ধারা।
উত্তর: দেখুন জারি করলে তো কেউ মানবে না। তৃণমূল কংগ্রেসের লোকেরাই ১৪৪ ধারার কিছুই মানে না। পুলিশ নাই, সিভিক পুলিশ লাঠি হাতে গরু তাড়াচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসের গুন্ডাদের গায়ে হাত বোলাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে সেটিং। ১৪৪ ধারা হয়তো আমাদের জন্যই করেছে। ওরা মারপিট করলে যাতে আমরা ঠেকাতে না পারি। বাইরের গন্ডগোল তো পুলিশ ঠেকাতে পারবে না! পুলিশ চাইলে ওই এলাকায় কাউকে ঢুকতে দিতে না পারে। কেউ মানবে না ১৪৪ ধারা। আজ থেকে মনোনয়ন বেশি হবে, গন্ডগোলও বাড়বে। তৃণমূল কংগ্রেস যদি চায়, গন্ডগোল বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিক। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে যেখানে গন্ডগোল হচ্ছে, সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: ঠাকুরবাড়িতে অভিষেকের চ্যালেঞ্জ শান্তনুকে।
উত্তর: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে সুপার সিএম মনে করছেন। সিএম তো আছেন ! তার উপরে চমকে ধমকে উনি সবাইকে ঠান্ডা করবেন, সেই অধিকার ওনাকে কে দিয়েছে? মতুয়া সমাজ তাঁদের গুরুকে তাঁরা প্রাণের চেয়েও বেশি শ্রদ্ধা করে। আর শান্তনু ঠাকুর শুধু সাংসদ নন, ওদের সংঘাধিপতি। ওই সমাজের সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। আর যে মন্দির আছে, ট্রাস্ট আছে, সেটা তাদের সম্পত্তির ব্যাপার। তাঁরা কাকে যেতে দেবেন, কাকে যেতে দেবেন না, সেটা তাঁদের ব্যাপার। অনুমতি নিয়ে যাওয়া উচিত, সেখানেও গায়ের জোর দেখাবেন। রাজনীতির কথা বলছেন! কে রাজনীতি শুরু করেছে মতুয়াদের নিয়ে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে বেশি কে করেছে? এখন উল্টো হয়ে গেছে তাই কষ্ট হচ্ছে।
প্রশ্ন: অভিষেককে চোর চোর স্লোগান।
উত্তর: জঙ্গলমহলেও শুনেছেন। সেখানেও কুর্মি সমাজ ওনাকে চোর বলেছে। যারা ব্র্যান্ডেড চোর, তাদেরকে সব জায়গাতেই চোর শুনতে হবে। বলতে হয় না, প্রমাণ হয়ে গেছে চোর। বাড়ির বউ বাচ্চা পর্যন্ত চোর। কুকুর বিড়াল পর্যন্ত চোর। তাদের কি আবার এনকোয়ারি করার দরকার আছে? সাজা দিতে গেলে এনকোয়ারি দরকার হয়! সাধারণ মানুষ সবই জানে।
প্রশ্ন: ঠাকুর বাড়ির ঘটনায় শুভেন্দুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানালেন শান্তনু ঠাকুর।
উত্তর: দেখুন বিচার বিভাগীয় তদন্ত হবে কিনা হবে আমি জানিনা! কিন্তু প্রকাশ্যে সবকিছু হয়েছে। গা জোয়ারি হয়েছে। সবকিছু দখল করে নেওয়ার যে চক্রান্ত চলছে। স্বৈরাচারী মানসিকতা। এটা পশ্চিমবাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেছেন। সেটা তাঁর পার্টির কোনায় কোনায় ছড়িয়ে গেছে। সব জায়গায় এরকম স্বৈরাচারী তৈরি হয়েছে। তার লেটেস্ট উদাহরণ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। হাজার হাজার পুলিশ নিয়ে ঘুরছেন। কেন তামঝাম নিয়ে গেছেন? এতদিন কেন ঠাকুরের কথা মনে পড়েনি? ঠাকুরবাড়ি যেতে পারতেন। নিজের বাড়ির কাছে কালীঘাট কতবার গেছেন, আমার সন্দেহ আছে! এসব নাটক বাজি বন্ধ করুন। ঠাকুর বাড়ি গিয়ে মাথা ঠুকলেই কি মতুয়ারা সব আপনাদের পুজো করবে? তাঁদের সঙ্গে যা ব্যবহার করেছেন, তাঁরা ভোলেননি।
প্রশ্ন: শুভেন্দু বলেছেন, রাজীব সিনহাকে নির্বাচন কমিশনার করা ঠিক হয়নি, আরও খতিয়ে দেখা উচিত ছিল।
উত্তর: ঠিক আছে, তাঁদের কাছেও লোক নেই তাঁরা দিয়েছে। এটা রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের ব্যাপার। রাজীব সিনহা আমাদের পছন্দেরও লোক নন। সরকার চাইবে তাদের তাবেদার লোক। সেটাই করেছেন।
প্রশ্ন: মালবাজারের গাজোল ডোবায় বিজেপির প্রচারে না যাওয়ায় মারধর।
উত্তর: জানিনা । প্রচার তো এখনও শুরু হয়নি! নির্বাচনের কোথাও কিছু দেওয়াল লিখল না, এখন তো সবাই নমিনেশন করতে ব্যস্ত। তারপরে প্রচার হবে। ঘটনার সত্যতা আমার জানা নেই। তবে অন্যায় কেউ করে থাকলে তার বিচার হওয়া চাই।
প্রশ্ন: প্রচারে এগিয়ে বিরোধীরা।
উত্তর: বিজেপি এগিয়ে আছে সবার থেকে। কারণ আমি আগেও বলেছি, আমরা প্রস্তুত আছি। সব আসনে আমরা প্রার্থী দেব। আজ কাল পরশু সেই নমিনেশন হবে। তৃণমূল এখনও প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করতে পারেনি। একেক আসনে দুজন তিনজন করে মনোনয়ন জমা দেবে। তারপর কাকে পার্টি সিম্বল দেবে, সেই নিয়ে গুলি বন্দুক দিয়ে সমাধান হবে। দেখুন অপেক্ষা করুন কী হয়!
প্রশ্ন: ডোমকলে তৃণমূল নেতার থেকে বন্দুক। দল থেকে বের করে দেওয়ার দাবি মদন মিত্রের।
উত্তর: মদন মিত্রের কথা কে শোনে ? তাকেই পার্টি থেকে বের করে দিয়েছে! নাটক করে বেঁচে আছেন। মদন মিত্রের কথাই মিডিয়ার লোকের গুরুত্ব থাকতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে কোনও গুরুত্ব নেই।
প্রশ্ন: পাহাড়ের নতুন সমীকরণ।
উত্তর: পাহাড়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির সঙ্গেই আছে। লোকসভায়, বিধানসভায় আমাদের জিতিয়েছেন। এবার লোকাল বডি অর্থাৎ পঞ্চায়েত নির্বাচনেও আমাদেরই জেতাবেন। ওখানে যে যে পার্টিগুলো ছিল তারা মানুষের ইচ্ছাকে পূরণ করতে পারেনি। সেইজন্য ওখানে উন্নয়ন আটকে গেছে পাঁচ সাত বছর ধরে। তিন চার বছর ধরে আন্দোলন হয়েছে। ওখানকার মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে যাবে না। সিপিএম কংগ্রেস তো ছিলই না। অন্য যে লোকাল পার্টিগুলো ছিল, তাঁরা এখন বিজেপির সঙ্গে আসছে। আমরাও চাই সম্মিলিতভাবে একটা বোর্ড তৈরি হোক। এতদিন ধরে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটা বন্ধ হোক। সাধারণ মানুষের যে উন্নয়ন আটকে আছে, সেটা শুরু হোক।