সংবাদ কলকাতা: বন্ধ হল রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী ব্রিটানিয়ার বিস্কুট কারখানা। সোমবার তারাতলার শতাব্দী প্রাচীন কারখানাতে ঝুলছে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস। ১৯৪৭ সালে কারখানাটি শুরু হয়েছিল। শত বছরের পুরনো এই বিস্কুট কারখানা বন্ধ হওয়ায়, স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়লেন। যদিও তারাতলার কারখানা বন্ধ হলেও বিস্কুট উৎপাদনের কাজে কোনও ব্যাঘাত ঘটবে না-বলেই দাবি করেছেন কারখানার এক আধিকারিক। এছাড়াও স্টক এক্সচেঞ্জে সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, কর্মীরা স্বেচ্ছাবসরের ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন।
যাঁরা ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন, তাঁরা সব থেকে বেশি টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। যার পরিমাণ ২২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়াও ৬ থেকে ১০ বছরের নিচে যাঁরা চাকরি করেছেন, সংস্থার তরফ থেকে তাঁদের ১৮ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যাঁরা তার চেয়েও কম সময়ে ওই সংস্থায় কাজ করেছেন, তাঁদের ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, ১২২ জন স্থায়ী কর্মীর পাশাপাশি এখন এই কোম্পানিতে ২৫০ জন অস্থায়ী কর্মী ছিলেন।
এখনও পর্যন্ত কারখানাটি কেন বন্ধ করে দেওয়া হল, এবিষয় অফিসিয়ালি কিছুই জানায়নি ব্রিটানিয়া। ওদিকে কারখানার কর্মীদের একাংশ জানিয়েছে, এদিন তাঁরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে হঠাৎ করেই কারখানার গেটে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস দেখতে পান। কর্মীদের একাংশের দাবি, কারখানায় উৎপাদন নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না। এমনকি তাঁদের আরও দাবি, উৎপাদিত বিস্কুটের বাজারে চাহিদা ভালোই ছিল। তা স্বত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ ঠিক কী কারণে কারখানা বন্ধের মতো রূঢ় সিদ্ধান্ত নিল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না-শ্রমিকরা। কর্মী মহলের একাংশ জানাচ্ছেন, স্থায়ী কর্মীদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে সংস্থা। যাঁরা এই ব্রিটানিয়া কোম্পানিতে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন। সেই কর্মীরাই সব থেকে বেশি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। কর্মী সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থায়ী কর্মীদের ১৩ লক্ষ টাকা থেকে ২২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েছে এই সংস্থা।
তারাতলার ব্রিটানিয়া কোম্পানি বন্দরের ১১ একর জমিতে ৯৯ বছরের লিজ নিয়ে চলছিল। ২০১৮ সালে সেই লিজ আরও ৩০ বছর বর্ধিত করে সংস্থাটি। সেই সময়ে ব্রিটানিয়ার চেয়ারম্যান নুসলি ওয়াদিয়া ঘোষণা করেছিলেন যে, এরাজ্যে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা ভাবা হচ্ছে। দেশের অন্যতম বড় খাদ্য প্রস্তুতকারী সংস্থা ব্রিটানিয়া। বাংলা তাঁদের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার। বছরে ৯০০ কোটি টাকার বেশি লাভ করে এই কোম্পানি। তবে জমির লিজ পুনর্নবীকরণ হওয়ার ৬ বছরের মধ্যে হঠাৎ কেন কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
উল্লেখ্য, তারাতলা রোড ধরে ব্রেসব্রীজ এবং তারাতলার মাঝখানে একটি সুস্বাদু মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসত নাকে। শহরে আসা নতুনদের কাছে এই গন্ধের উৎস অজানা হলেও দীর্ঘদিন এই রাস্তা হয়ে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁদের ভালোভাবেই জানা ছিল, কোথা থেকে আসত এই সুগন্ধ। এবার থেকে তারাতলা রোড হয়ে গেলে, আর সেই মিষ্টি সুগন্ধ পাওয়া যাবে না। কারণ, তারাতলা ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ করে দিল ব্রিটানিয়া।
							previous post
						
						
					
							next post
						
						
					